মহাবিশ্বের বিস্ময়কর ৫টি গ্রহ!


মহাবিশ্বের বিস্ময়কর গ্রহ

আমাদের এই বিস্ময়কর মহাবিশ্ব কত বিশাল তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এই সুবিশাল এবং রহস্যময় মহাবিশ্বের খুব নগন্যই আমরা আবিষ্কৃত করতে পেরেছি।

আর বেশিরভাগই আমাদের অজানা। আমরা যখন মহাবিশ্বের বিশালতার কথা চিন্তা করে আমাদের এই ছোট্ট পৃথিবীটার কথা ভাবি তখন আমাদের সবকিছুই ফিকে মনে হয়।

এই সুবিশাল ও রহস্যময় মহাবিশ্বের এমনই বিস্ময়কর দশটি গ্রহ সম্পর্কে আজ আমরা জানব যা আপনাকে অবাক করে তুলবে-

1)CoRot-7b

CoRot-7b নামক এই গ্রহটি ২০০৯ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী আবিষ্কৃত হয়। [Wikipedia-এর তথ্যমতে]৷ এই গ্রহটি আমাদের পৃথিবী থেকে দেড় গুণ বড় এবং ৪৮৯ আলোকবর্ষ দূরে।  

পৃথিবী সূর্যের যতটুকু দূরত্ব দিয়ে ঘুরে তার চেয়েও ৬০গুণ কম দূরত্ব দিয়ে এটি তার নিজের নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরে। এর নক্ষত্রের নাম CoRot-7

বুঝতেই পারছেন এত কাছ দিয়ে আবর্তন কারণে এর তাপমাত্রা কেমন হতে পারে। তাছাড়াও এটি তার নক্ষত্রের এতো কাছে থাকার কারণে দৃঢ় ভাবে আটকে আছে। 

এরকম দৃঢ় ভাবে আটকে থাকার কারণে এর একটা দিক সবসময় তার নক্ষত্রের কাছে থাকে। ফলে ওই পাশটা এতটাই গরম থাকে যা আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। 

CoRot-7b আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে গরম গ্রহ শুক্রের থেকেও প্রায় ৪.৫ গুণ বেশি গরম । এর তাপমাত্রা ২০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। 

আমাদের পৃথিবীতে যেমন পানির সমুদ্র রয়েছে তেমনি এই গ্রহে রয়েছে লাভার সমুদ্র। এই লাভা আবার বাষ্প হয়ে গ্রহটিতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে।   

আর অন্যদিকে এর অন্ধকার দিকের তাপমাত্রা -২৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা এত কম যে কোনো মানুষ ০.১ সেকেন্ডের মধ্যেই জমে বরফ হয়ে যাবে।              

2)Keplar-16b  

Keplar-16b গ্রহটি ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে আবিস্কৃত হয়। পৃথিবী থেকে ২০০ আলোকবর্ষ দূরে এই গ্রহটি রয়েছে। গ্রহটি অর্ধেক গ্যাস এবং বাকী অর্ধেক পাথর এবং বরফ দ্বারা গঠিত।     

এই গ্রহটি আগের গ্রহের মতো এত ভয়ংকর না। তবে এই গ্রহে এমন একটি অদ্ভুত বিষয় রয়েছে যা আপনাকে চমকে দেবে। 

আমরা পৃথিবীতে সবসময় একটি ছায়া দেখতে পায়। যা দিনের বেলা সবসময় আমাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। এর কারণ আমাদের কাছে আলোর একটাই উৎস আছে। আর তা হচ্ছে সূর্য।

কিন্তু আপনি যদি এই গ্রহে ল্যান্ড করেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সঙ্গে আরও কেউ একজন আছে। 

কারণ আপনি সেখানে একটি ছায়ার পরিবর্তে দুটি ছায়া দেখতে পাবেন। আর এরকমটা হওয়ার কারণ ওই গ্রহের একইসাথে দুই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরা। ওই গ্রহের দিন শুরু হয় দুই নক্ষত্রের সাথে।  

3)Gliese 1214b

পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে এই গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর তুলনায় কয়েকগুণ বড়। এটি ১৬ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে আবিস্কৃত হয়। এই গ্রহটি 'Ocean Planet' নামে সবচেয়ে বেশী পরিচিত, তাই বিজ্ঞানীরা এর ডাকনাম দিয়েছে "The water world" 

আমাদের পৃথিবীর ৭০%-ই পানি দিয়ে ঘেরা কিন্ত এটি পৃথিবীর মোট ভরের মাত্র ০.০০৫%। কিন্তু এই গ্রহের ১০% ভরই দখল করে রয়েছে পানি। তাই ধারণা করা হয় এই গ্রহের সমুদ্রগুলো কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে।      

এই গ্রহে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তার তুলনায় আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রশান্ত মহাসাগর এক বালতি পানি মাত্র।

আমাদের পৃথিবীর সাগর সর্বোচ্চ ১১কিলোমিটার গভীর। আমরা এই সমুদ্রগুলোর মাত্র ৫ শতাংশই আবিষ্কৃত করতে পেরেছি। 

আর এই ৫ শতাংশের মধ্যেই কত বিচিত্র ভয়ংকর প্রাণী রয়েছে। আর Gliese 1214b-এর সমুদ্র তো কয়েকশ কিলোমিটার গভীর। একবার ভাবুন তো এই গ্রহে যদি প্রাণের বিকাশ ঘটে তাহলে কতো ভয়ংকর ও বিচিত্র প্রাণী থাকতে পারে!                           

4) 55 cancri E 

আপনার যদি হীরার শখ থাকে তবে আপনার এই গ্রহটি একবার দেখা উচিত। গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে। আবিষ্কৃত হয় ৩০ আগস্ট, ২০০৪ সালে।  

এই গ্রহের সব জায়গায় শুধু হীরা আর হীরা। আসলে গ্রহটির বায়ুমন্ডল কার্বন দ্বারা গঠিত। আর এর নক্ষত্রের তাপমাত্রার কারণে কার্বনগুলি আস্তে আস্তে হীরাতে পরিণত হয়। 

এই গ্রহে এত পরিমাণ হীরা রয়েছে আর তা যদি পৃথিবীর মূল্যে হিসাব করা হয় তার পরিমাণ দাড়াবে 27 Noniolion ডলার। 1 Noniolion এর পেছনে ৩০টি '০' থাকে।  আর এর থেকেই আপনি এই গ্রহের মূল্য আন্দাজ করে নিতে পারেন। 

আচ্ছা যদি এই গ্রহে হীরা আনতে যাওয়া সম্ভব হয় তাহলে কী হতে পারে?

এই গ্রহ পৃথিবী থেকে শুধু ২গুণ বড়ই না এর গ্র‍্যাভিটি 20.99 g. এর গ্র‍্যাভিটি এত বেশী থাকার কারণে আপনি যদি সেখানে যান তাহলে মাটিতে চাপা পড়ে যাবেন। আর এই গ্রহের প্রচন্ড তাপমাত্রা আপনাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে। 

5) HD 189733 b   

HD 189733 b গ্রহটি ৫ অক্টোবর,২০০৫ সালে আবিস্কৃত হয়। গ্রহটিকে "Blue marble"-ও বলা হয়। এই গ্রহটিতে এত জোরে তুফান হয় যার গতি বন্দুকের গতির থেকেও বেশি। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৬৩ আলোকবর্ষ দূরে। 

আর এই গ্রহটিও CoRot-7b গ্রহের মতো তার নক্ষত্রের সাথে দৃঢ় ভাবে আটকে আছে। 
যেসব গ্রহ তার নক্ষত্রের সাথে টাইটলি লক থাকে ঐসব গ্রহের একপাশ অনেক গরম থাকে এবং অন্যপাশ থাকে অনেক ঠান্ডা। 

কিন্তু এটি ব্যতিক্রম৷ এর দুই পাশই ভীষণ গরম। এর নক্ষত্রের দিকের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা থাকে ৯৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং অন্ধকার দিকের তাপমাত্রা থাকে ৬৮৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এর এরকম অদ্ভুত রকমের তাপমাত্রার কারণ এর প্রচন্ড গতির ঝড়।  এই গ্রহের ঝড়গুলোর গতি হয় ৫৪০০মাইল/ঘন্টা (২ কি.মি প্রতি সেকেন্ড)। যা শব্দের গতির থেকেও প্রায় ৬ গুণ বেশি।

পৃথিবীতে সর্বোচ্চ গতির বাতাস ছিল আমেরিকার ওকলাহোমাতে ১৯৯৯ সালের ৩মে এক টর্নেডোর। টর্নেডোটির সর্বোচ্চ গতি ছিল ৩০১±২০ মাইল/ঘণ্টা (৪৮৪±৩২ কিমি/ঘণ্টা) । যা ওই গ্রহের ঝড়গুলির গতির থেকেও ১৮গুণ কম।      

Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post