৬টি মাংসাশী ও পতঙ্গভুক উদ্ভিদ!

মাংসাশী উদ্ভিদ, পতঙ্গভুক উদ্ভিদ

মাংসাশী উদ্ভিদ (in English- Carnivorous Plant) । উদ্ভিদ মাংস খায়, অর্থাৎ কীট-পতঙ্গ শিকার করে খায় এ কথা শুনলে আশ্চর্য লাগারই কথা। মাংসাশী উদ্ভিদকে পতঙ্গভুক উদ্ভিদও বলা হয়। পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ আছে, যা অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়।

তবে এ কথা সত্য যে এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু উদ্ভিদ কীট-পতঙ্গ শিকার করে খায়। ফাঁদ পাতা এবং প্রাণীকে হজম করার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদ বিশেষভাবে পরিচিত।

সবচেয়ে বেশি প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ দেখা যায় উত্তর আমেরিকায়।

মাংসাশী উদ্ভিদ জলাভূমি, পাথুরে এলাকা এবং অন্যান্য মাটিতেও জন্মাতে পারে। এ উদ্ভিদগুলাে বিভিন্ন উচ্চতা এবং জলবায়ুতে বেঁচে থাকতে পারে। তবে এরা শুষ্ক আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না।

মাংসাশী উদ্ভিদগুলো বেশ রঙিন হয়। এগুলাের সুন্দর গন্ধ আছে এবং এরা অধিক পরিমাণে সুস্বাদু পানীয় উৎপন্ন করে। 

প্রায় সব প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদই কীট-পতঙ্গ এবং ছােট ছােট স্তন্যপায়ী প্রাণী হজম করে থাকে। বড় আকারের মাংসাশী উদ্ভিদ ইদুর এবং ব্যাঙও হজম করতে পারে।

অধিকাংশ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদেই কীট-পতঙ্গ দ্বারা পরাগায়িত থাকে। মাংসাশী উদ্ভিদ সর্বোচ্চ ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। নিচে কিছু মাংশাসী উদ্ভিদের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

ভেনাস ফ্লাইট্র‍্যাপ | Venus Flytrap

ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ আশ্চর্য রকমের একটি মাংসাশী উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ কেরোলিনায়।

কীট-পতঙ্গ এদের প্রধান খাদ্য। ভেনাস ফ্লাইট্র‍্যাপ উদ্ভিদের ব্যাসার্ধ হয় প্রায় ৫ ইঞ্চি। প্রতিটি উদ্ভিদে জোড়া পাতাসহ ৬টি ডাল থাকে। পাতাগুলোর প্রান্তে দাঁতের মতো বস্তু থাকে। 

যখন পাতাগুলো বন্ধ হয়ে যায় তখন এটি একটি ফাঁদে পরিণত হয়। এর পাতাটি দুটি অংশে বিভক্ত। 

কীট-পতঙ্গ পাতাতে বসলেই পাতাটি বন্ধ হয়ে যায়, যেন একটি মৃত্যু ফাঁদ। এরপর উদ্ভিদটি তার খাদ্য হিসেবে কীট-পতঙ্গ বা প্রাণীর গলিত দেহকে এনজাইমে পরিণত করে গ্রহণ করে।

কীট-পতঙ্গ হজম করার ৫ থেকে ১২ দিন পর পুনরায় পাতাগুলাে খুলে যায়। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ সাধারণত পিপড়া খায়। তবে এরা মাছি, গুবরে পােকা, স্লাগ, মাকড়সা এমনকি ক্ষুদ্রাকার ব্যাঙও খেয়ে থাকে। 

চার্লস ডারউইন ১৮৭৫ সালে প্রকাশিত 'পতঙ্গভূক উদ্ভিদ' গ্রন্থে লিখেছিলেন যে, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ পৃথিবীতে অত্যন্ত আশ্চর্যরকম উদ্ভিদ।

আরও পড়ুনঃ

কলসি উদ্ভিদ | Pitcher plant  

কলস উদ্ভিদ এক ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস উত্তর আমেরিকায়। এ উদ্ভিদটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা,আলাবামা এবং জর্জিয়ার সংরক্ষিত এলাকায় দেখা যায়।

এগুলোে বালিময় স্থান এবং কর্দমাক্ত মাটিতে জন্মায়। কলস উদ্ভিদ ৮ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।

এর পাতাগুলাে কলস আকৃতির নলাকারে রূপান্তরিত হয় বলে এর নাম হয়েছে কলস উদ্ভিদ।

কলস উদ্ভিদ সুগন্ধ ছড়ায় এবং এতে বিভিন্ন ধরনের কীট-পতঙ্গ আকৃষ্ট হয়। কলস উদ্ভিদের পাতাগুলাে দেখতে সত্যিই অদ্ভূত।

পাতাগুলাে যখন কলস আকৃতি ধারণ করে তখন এটি অধিকাংশ কীট-পতঙ্গের জন্য মারাত্মক ফাদ হয়ে যায়। এখানে কোনো কীট-পতঙ্গ এসে বসলে পিচ্ছিল মুখে পিছলে ভেতরে পড়ে যায়।

তারপর ভেতরের তরলে ডুবে যায় , আর কলস উদ্ভিদ সেগুলোে হজম করে ফেলে। কলস উদ্ভিদ ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

সেফালোটাস | Cephalotus

সেফালােটাস হলাে ক্ষুদ্রাকৃতির মাংসাশী উদ্ভিদ। এটির মাত্র একটিই প্রজাতি আছে। সেফালােটাস অস্ট্রেলীয় কলস উদ্ভিদ।

অধিকাংশ মাংসাশী উদ্ভিদের যেখানে এক ধরনেরই পাতা জন্মায়, সেখানে সেফালােটাস মাংসাশী কলস উদ্ভিদের দুটি ভিন্ন ধরনের পাতা জন্মায়। আর এগুলোে হলাে অমাংসাশী পাতা এবং কলস পাতা।

কলস পাতার মধ্যে কীট-পতঙ্গ বসলেই পিছলে ভেতরে পড়ে যায় এবং হজমকারক তরল দিয়ে উদ্ভিদটি কীট-পতঙ্গকে হজম করে ফেলে।

ড্রসেরা | Drosera

ড্রসেরা সাধারণভাবে সানডিউস (সূর্যশিশির) নামে পরিচিত। ড্রসেরা মাংসাশী উদ্ভিদের অন্যতম বৃহত্তম একটি বর্গ। এ বর্গে কমপক্ষে ১৯৪টি প্রজাতি রয়েছে।

ড্রসেরা উদ্ভিদের পাতাগুলাে ছোট আর গোলাকার। এ উদ্ভিদটি আঠালাে ফাঁদওয়ালা মাংসাশী উদ্ভিদের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ ।

গ্রীষ্মকালে গােলাকার পাতাগুলাের উচু কাণ্ডগুলোতে সাদা সাদা ফুল ফোটে। পাতাগুলাে উজ্জ্বল লাল রঙের হয়। মনে হয় ওগুলোর ওপর শিশিরকণা চিকচিক করছে। লালচে শিশিরবিন্দু দ্বারা আবৃত এ পাতাগুলাে আসলে কীট-পতঙ্গ ধরার মরণ ফাঁদ।

ড্রসেরা উদ্ভিদের পাতাগুলো বিভিন্ন উচ্চতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বোঁটা দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রতিটি বোঁটার ওপর থাকে অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থি বা অঙ্গ, যা এক ধরনের স্বচ্ছ আঠালা তরল পদার্থ উৎপন্ন করে।

এ তরল বোঁটাগুলোর ওপর শিশিরবিন্দুর মতাে জমা হয়। তরল নিঃসরণকারী গ্রন্থিটি দেখতে লাল বলে এর ওপরের তরল পদার্থটিও লালচে বলে মনে হয়।

ড্রসেরা উদ্ভিদ বাতাসে এক ধরনের সুগন্ধ ছড়ায়। মাছি ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গ ড্রসেরার উজ্জ্বল লাল রং, শিশিরবিন্দু আর সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে উদ্ভিদের কাছে চলে আসে।

কিন্তু পাতার ওপর বসা মাত্রই কীট-পতঙ্গের পা গুলাে পাতার উঁচু বোঁটায় থাকা তরল পদার্থে আটকে যায়। পা ছাড়িয়ে নিতে ওরা যতই টানাটানি করে ততােই পাতার গ্রন্থিগুলাে থেকে আরাে বেশি করে আঠালাে রস বেরােয়। এর ফলে কীট-পতঙ্গগুলো আরাে শক্তভাবে পাতায় আটকে যায়।

তারপর সম্পূর্ণ পাতাটি কুঁচকে গিয়ে কীট-পতঙ্গের চারপাশে একটি পেয়ালার মতাে আকার গঠন করে। কীট-পতঙ্গের দেহের নরম অংশগুলাে গলে গিয়ে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত ড্রসেরা উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমগুলাে কাজ করে। 

৪ থেকে ৫ দিন পর ড্রোসেরা উদ্ভিদের পাতা ও বোঁটাগুলাে আবার আগের মতাে সােজা হয়ে যায়।

গোখরো লিলি | Cobra lily

গােখরাে সাপের মতাে ফণা তােলা মাংসখেকো ভয়ংকর সুন্দর উদ্ভিদ হলাে 'গােখরাে লিলি'। এর আসল নাম ডার্লিংটোনিয়া ক্যালিফোর্নিয়া। তবে এটি ক্যালিফোর্নিয়া কলস উদ্ভিদ, কোবরা লিলি, কোবরা উদ্ভিদ ইত্যাদি নামে পরিচিত।

কীট-পতঙ্গভূক উদ্ভিদের সারিতে আগ্রাসী স্বভাবের গােখরাে লিলি এক উল্লেখযোেগ্য সদস্য। গােখরাে লিলি আসলে বিরল প্রজাতির এক কলস উদ্ভিদ।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় এর বসতবাড়ি। এ উদ্ভিদটি পরিষ্কার জলাভূমিতে জন্মে। গােখরাে লিলি সূর্যের আলােতে ভালাে জন্মে। ছায়াতে এরা ভালােভাবে বাড়তে পারে না।

প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময় গােখরাে লিলির ফণার নিচে মধু থাকে, আর সে মধু খেতে ছুটে আসে কীট-পতঙ্গ। এটিই তার শিকারের কৌশল ও ফাঁদ। একবার এ ফাঁদে ঢুকলে আর বেরােবার পথ নেই। এক সময় গােখরাে লিলি শিকারকে হজম করে ফেলে। 

এই ভয়ংকর সুন্দর উদ্ভিদটি যুক্তরা্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। ১৮৪১ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম ডি. ব্রাকেনরিজ শাস্তা পর্বতে গােথরাে লিলিটি আবিষ্কার করেন।

ব্লাডারওয়ার্ট | Bladderwort

ব্লাডারওয়ার্ট উদ্ভিদের ২৩৩টি প্রজাতি আছে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এ উদ্ভিদটি দেখা যায়।

অধিকাংশ প্রজাতির ব্লাডারওয়ার্ট উদ্ভিদ দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় জন্মায়। ব্লাডারওয়ার্ট উদ্ভিদের লম্বা আনুভূমিক কাণ্ড আছে, যা লম্বায় ৮ থেকে ৮০ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ৪ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

৮০ শতাংশ ব্লাডারওয়ার্ট প্রজাতি শক্ত মাটিতে এবং ২০ শতাংশ প্রজাতি পানিতে জন্মায়। ব্লাডারওয়ার্ট-এর মূল নেই। কাণ্ড পানির পৃষ্ঠদেশে উন্মুক্তভাবে ভাসে, না হয় কাদার মধ্যে শায়িত অবস্থায় থাকে।

আশ্চর্য ব্যাপার হলাে, ব্লাডারওয়ার্ট সেকেন্ডের ৩৫ ভাগের ১ ভাগ সময়ের মধ্যে কীট-পতঙ্গকে করায়ত্ব করে।

এ উদ্ভিদের কাণ্ডটি শতাধিক ফাঁদ দ্বারা ঢাকা থাকে। জলজ ব্লাডারওয়ার্ট উদ্ভিদের ফাঁদগুলাে বড় আকারের হয়। 

ব্লাডারওয়ার্ট উদ্ভিদের ফুলগুলাে ঠোঁট আকৃতির হয়। এগুলাে সাধারণত হলুদ রঙের। ফুলগুলা জুলাই এবং আগস্ট মাসে ফোটে এবং কীট-পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। কিছু জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে এ উদ্ভিদটি ব্যবহৃত হয়।
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

2 Comments

  1. Wonderful article.we want this type of article again.keep on....

    ReplyDelete
  2. Exellent post.These information are very helpful

    ReplyDelete
Previous Post Next Post