ভূত নিয়ে আসলে বিজ্ঞান কি বলে? এত এত ভূতের ঘটনা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান কেন ভূতে বিশ্বাস করে না?
লেখকঃ ফুয়াদ হাসান ফাহিম
কারন ভূতের প্রতিটি ঘটনারই সম্ভাব্য ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছে আছে।
ছোটবেলা থেকে কেউ আপনাকে বলল ওই তেতুল গাছের নিচে ভূত আছে এবং আপনি সেটি বিশ্বাস করে নিলেন। একদিন সত্যি সত্যি ওই তেতুল গাছের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভূত দেখলেন। তার মানে আসলেই কি সেখানে ভূত ছিল?
উত্তর হলো, না। সেখানে কোনো ভূত ছিল না। তাহলে আপনি যা দেখেছিলেন তা আসলে কি ছিল?
আসলে আপনি যখন সেই তেতুল গাছের ভূতে বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন তখন আপনি ওই ভূত কল্পনা করে নিয়েছিলেন এবং এক পর্যায়ে আপনার মস্তিষ্কের নিউরনে সেটি গেঁথে যাবে। আর আপনি যখন ওই তেতুল গাছের নিচ দিয়ে যাবেন তখন আর কিছু মনে পড়ুক বা না পড়ুক ওই ভূতের কথা ঠিকই মনে পড়বে। আর সেই সময়ই হয়তো আপনি ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনের শিকার হবেন।
ভুতের বৈজ্ঞানিক ব্যবচ্ছেদ করতে হলে যেসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার তার মধ্যে অন্যতম কিছু বিষয় হচ্ছে-
1.এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম
2.স্কিজোফ্রেনিয়া
3.ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিজঅর্ডার
4.হ্যালোসিনেশন {এটার আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে}
5.আলেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি
আজকে শুধু হ্যালোসিনেশনের দুইটি প্রকারভেদ নিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। কারন মানুষের ভূত দেখার পেছনে যে কারণটিকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় সেটা হচ্ছে এই হ্যালোসিনেশন। আবার এই হ্যালোসিনেশন হতে পারে স্কিজোফ্রেনিয়া নামক এক গুরুতর মানসিক রোগের কারণে। আবার কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ার কারণেও মানুষ হ্যালুসিনেশনের শিকার হতে পারে।
হ্যালোসিনেশন হল, বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই মস্তিস্কে বাস্তবের মত অনুভূতি প্রত্যক্ষণের প্রক্রিয়া। এটি একদম বাস্তবসদৃশ এবং স্পষ্ট হবে। আর যে হ্যালোসিনেশনের শিকার হয় সে বুঝতেই পারে না যে তার হ্যালোসিনেশন হচ্ছে।
ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন বা দৃষ্টির হ্যালোসিশেন: ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন তথা দৃষ্টির হ্যালোসিশেন হল, "বাইরের কোনো উদ্দীপক ছাড়াই দর্শন অনুভূতি প্রত্যক্ষণ করার প্রক্রিয়া"। ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনকে সাধারণ ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন এবং কম্পেক্স বা জটিল ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
ভূত দেখতে এই দুই ধরনের হ্যালোসিনেশনের যেকোন একটি হলেই চলে। সাধারন ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন এতটা বাস্তব হয় না। এটি হলে ভূত অথবা এরকম আকৃতির কিছু দেখবে তবে সে এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে না এবং সেটা অনেকটা অস্পষ্ট হবে। আর জটিল ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন হলে সে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে যে, ওটা একদম বাস্তব জীবন্ত একটা ভূত ছিল।
অডিটোরি বা শ্রুতির হ্যালোসিনেশন: স্কিজোফ্রেনিয়া নামক যে মানসিক রোগের কথা প্রথমে বলেছিলাম সেটিতে কেউ আক্রান্ত হলে অডিটরি বা শ্রবণেন্দ্রিয়ের হ্যালোসিনেশন হবে তার নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। সে প্রায়ই অদ্ভুত কারো কন্ঠ শুনতে পাবে। সেই কণ্ঠ তাকে যেকোন আদেশ, উপদেশ বা সারাক্ষন অভিশাপও দিতে পারে।
সাধারণত জটিল হ্যালোসিনেশনের ক্ষেত্রে এরকম হয়ে থাকে। এই আওয়াজ স্পষ্টও হতে পারে বা অস্পষ্ট, পরিচিতও হতে পারে বা অপরিচিত, সুশ্রাব্য বা কর্কশ। রোগী যদি এক বা একাধিক মানুষের কথা বলার কণ্ঠস্বর শুনতে পায় তাহলে এই অডিটোরি হ্যালোসিনেশনকে সাধারণত সাইকোটিক রোগসমূহ যেমন, স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এটি মাঝে মাঝে এমন জটিল পর্যায়ে যেতে পারে যেন রোগীর মনে হবে এক বা একাধিক মানুষ সারাক্ষণ তার পেছনে কথা বলছে এবং তাকে লক্ষ্য করছে । তবে রোগী যখন পেছনে তাকায় তখন কিছুই দেখতে পায় না। (আসলে যেটির কোনো অস্তিত্বই নেই সেটি কিভাবে দেখবে? :)