আপনি যদি পড়া মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল অথবা পড়া মুখস্ত করার সঠিক নিয়ম কি তা জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্যই৷
এখানে বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন রিসার্চে করা ফলাফল হিসেবে যা পাওয়া গিয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা সারাদিনে খুব অল্প সময় পড়াশোনা করে। কিন্তু যতটুকু সময় পড়াশোনা করে ততটুকু খুব মনোযোগ দিয়ে করে।
আবার এমনও অনেকে আছে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ের মধ্যে মাথা গুজে থাকে, কিন্তু তাদের মন বইয়ের দিকে না থেকে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়।
কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, যে অল্পসময় পড়াশোনা করেছে কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়েছে সে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীর থেকে অনেক ভালো ফলাফল করেছে।
অর্থাৎ ২য় শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পদ্ধতিটাই ভুল ছিল। কে দিনে কতটুকু সময় পড়ছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সে কিভাবে পড়ছে।
আজ আমি আপনাদের সাথে এমন কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতি শেয়ার করতে যাচ্ছি যার সাহায্যে আপনি পরার সময় কি কি ভুল করছেন তা সহজেই বের করে আপনার পড়ালেখার গতি বৃদ্ধি করতে পারবেন।
পড়া মুখস্ত করার একটি অসাধারণ কৌশল : পড়ার সময় ছোট ছোট বিরতি নেওয়া
অনেকেই আছে যারা পরীক্ষার আগে নিজেকে টানা 4-5 ঘণ্টা একটা ঘরে বন্দি করে রেখে পড়া শুরু করে দেয় এবং পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে।
স্বাভাবিক ভাবে দেখলে মনে হতে পারে, এতে বুঝি সত্যিই পড়া অনেকটা এগিয়ে ফেলা যাবে.
স্বাভাবিক ভাবে দেখলে মনে হতে পারে, এতে বুঝি সত্যিই পড়া অনেকটা এগিয়ে ফেলা যাবে.
কিন্তু গবেষনার ফলাফল কিন্তু তা নয়। Arriga এবং Lleras এর 2011 সালে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে একটানা না পড়ে কিছুক্ষণ পর পর ছোট ছোট ব্রেক নিয় পড়লে আমরা আমাদের মনোযোগ অনেকখানি ধরে রাখতে পারি।
তাই কিছুক্ষণ পর পর ছোট ছোট বিরতি নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
Ultradian rhythm অনুসারে একটানা 90 বা 120 মিনিট কোনকিছুতে মনোযোগ করার পর আমাদের মস্তিষ্কের 15 মিনিটের একটা ব্রেক নেওয়া জরুরী।
তবে এটা ব্যাক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে. আপনার নিজেকে সেটি খুজে বের করতে হবে. আর ব্রেক নেওয়ার standard সময় হচ্ছে 15 মিনিট।
তবে কখনো 10 মিনিটের কম বা ২৫ মিনিটের বেশী যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আর যে বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে ব্রেক নেওয়ার সময় যাতে আমরা মোবাইল বা ল্যাপটপ না ধরি। কারণ এতে করে আমাদের ব্রেইন বিশ্রাম নেওয়ার পরিবর্তরও সচল হয়ে উঠবে৷
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত রাগের অপকারিতা এবং রাগ কমানোর ও নিয়ন্ত্রণ করার ৩টি উপায়!
পড়া মুখস্ত করার সহজ উপায়: যা পড়েছেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ বোঝার চেষ্টা করুন-
পরীক্ষার আগে আমাদের সবারই অনেক অনেক কিছু পড়ে মুখস্ত করতে হয়। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আমরা যা মুখস্ত করি তার সবকিছুই মনে রাখতে পারি না।
কিন্তু আমরা যদি কিছু পড়া বা মুখস্ত করার পর সেগুলো আবার সংক্ষিপ্ত করে একটা সারাংশের মতো করে পড়ি তাহলে কিন্তু তা আমাদের পড়া মনে রাখার জন্য অনেক সহায়ক হবে৷ এভাবে আপনি ৯০% পড়া সহজেই মনে রাখতে পারবেন।
এতে করে আপনার অধিক পড়া মনে রাখার চাপ কমবে এবং পরবর্তীতে সামারাইজ থেকে বিস্তারিত লিখতেও আপনার কোনো অসুবিধা হবে না।
এটি অন্য একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হাইলাইট করার মতোই কার্যকরী।
একটি গবেষণায় জানা গেছে সামারাইজ করে পড়া মনে রাখার চেষ্টা করলে কোনো শিক্ষার্থীর সেই বিষয়টি মনে রাখার ক্ষমতা ৯০% বৃদ্ধি পায়।
তাই আজ থেকেই পড়া মুখস্ত করার সময় অন্য জায়গায় আপনার পড়াটার সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখে পড়ার অভ্যাস করুন৷
ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে পড়ার চেষ্টা করুন
২০০৮ সালে জুডি উইলিসের করা একটি রিসার্চে জানা যায় ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশকে উদ্দীপিত করে। (আপনি ইন্টারনেটে Judy Willis-এর লেখা এরকম অনেক বই সম্পর্কে জানতে পারবেন)
তাই কোনো কিছু বোঝা বা পড়ার সময় আপনি মস্তিষ্কের যত বেশি অংশ সজাগ রাখতে পারবেন আপনি তত সহজে বিষয়টা বুঝতে পারবেন এবং মনে রাখতে পারবেন৷
তাই আপনার বইয়ের কোনো নির্দিষ্ট অধ্যায় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখুন-
- ক্লাসনোট গুলো পড়া
- ইউটিউব থেকে সেই টপিকে কোনো লেকচার দেখা
- অনলাইনে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়া
- সেই টপিকের উপর বিভিন্ন প্রশ্ন সমাধান করা
- নিজে বুঝার পর অন্যকে বুঝানোর চেষ্টা করা
যেসব টপিকের উপর এগুলো করা সম্ভব হবে সেগুলোতে করুন। তাহলে আপনার টপিকটা পাকাপোক্ত ভাবে বুঝতে আর কিছু বাদ থাকবে না এবং একইসাথে এক্সামের জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারবেন।
একইদিনে একাধিক বিষয় পড়ুন
২০১২ সালে Doug Rohrer-এর করা একটি রিসার্চে জানা গেছে একটাই বিষয় একদিনে অনেকখানি পড়ার চেয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় অল্প অল্প করে পড়া বেশি কার্যকরী।
তাই সামনেই যদি আপনার কোনো পরীক্ষা থেকে থাকে তাহলে আপিনার সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি বিষয় প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ার চেষ্টা করুন।
একটাই বিষয় একদিন পড়লে প্রায় একইরকম তথ্য আমাদের মস্তিষ্কের আলাদা আলদাভাবে বুঝতে গেলে গুলিয়ে ফেলতে পারে।
অন্যদিকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পড়লে তথ্যগুলি সম্পূর্ন ভিন্ন রকম হওয়ায় আমাদের মস্তিষ্কের সেটি ধরে রাখতে বেশী সুবিধা হয়৷
রুটিন করে নিয়মিত পড়ুন ও রিভিশন দিন
২০০৮ সালে করা Nicholas Cepeda-এর করা একটি রিসার্চে জানা গেছে আমরা যদি কোনো জিনিস দীর্ঘদিন মনে রাখতে চায় তাহলে আমাদের সেটি একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে কিছু দিন পর পর রিভিশন দেওয়া দরকার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কত দিন পরপর পড়া রিভিশন দেওয়া উচিত?
সেটি বুঝতে নিচের রুটিনটি দেখুন
তাহলে আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি আপনি পড়া মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখানে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স এবং তথ্যসূত্র anchor করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Tags:
Life Hacks