আমাদের মধ্যে যারা ছাত্র, যারা স্কুল বা কলেজে পড়াশোনা করি তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রেরই প্রধান সমস্যা হলো পড়াশোনায় মন না বসা।
তার মানে এই না যে এই সব ছাত্রের কখনো পড়তেই ইচ্ছাই করে না।
সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক ছাত্রই চাই পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করতে। কেননা, জীবনে বড় হতে কে না চায়?
কেনা চায় সবার সেরা হতে? যখনই আমরা পড়তে বসার চিন্তা করি কিংবা পড়তে বসেও যাই তখন ভাবি এবার মনে হয় সিলাবাস শেষ করেই ফেলব।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে,কয়েক মিনিট পড়েই আমাদের সকল ইচ্ছাশক্তি শেষ হয়ে যায়। পড়াশোনা থেকে আমাদের মনোযোগ চলে যায়। তখন পুরো পৃথিবীর কথা আমাদের মনে পড়ে।
ভার্চুয়াল জগতের কথা মনে পড়ে। যেমন-ফেসবুকে কি কেউ আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিল, মেসেঞ্জারে কেউ হয়ত আমাকে মেসেজ দিল,নাহ!!!
আমার গেমিং পারফর্মেন্স কেমন যেন খারাপ হয়ে যাচ্ছে...চিকেন ডিনারটা আজকে কিছুতেই পেলাম না কিংবা COC-তে এক্টুর জন্য থ্রি স্টার টা পেলাম না...এরকম আরও অনেক কথা মনে পড়ে।
এসব চিন্তা করতে করতেই আমাদের পড়ার সময় পাড় হয়ে যায়। ফলে আমাদের পড়া আর টপ করা শুধুই ভাবনা হয়ে যায়। তারপর আমরা ভাবি,
ধুর!!আজকে তো অনেক ঘুম পাচ্ছে,আর ভালো লাগছে না। কালকে ঠিক পড়ব।
এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যায়। আর স্টডেন্ট লাইফ ও শেষ হয়ে যায়। ফলে পরীক্ষার সময় গিয়ে বলি, "কেন যে পড়লাম না?"
আপনিও যদি এমন ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই টিপসগুলো পড়ুন, যেগুলো আপনাকে পড়াশোনায় মনোযোগ বসাতে সাহায্য করবে।
- আরও পড়ুন: পড়া মুখস্ত করার অসাধারণ ৫টি কৌশল!
১.পড়তে বসার আগে যে নিয়ম অনুসরণ করতে হবে:
যখন পড়তে বসব তখন আমাদের প্রথম কাজ হলো মোবাইলকে চোখের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
পারলে মোবাইলটি সুইচ অফ করে রাখা।তারপর একটি সঠিক রুটিন ফলো করে পড়া শুরু করুন।
আর শুরুর এই প্রথম দিনে অবশ্যই পড়ার এই সময়টিকে একটু কম রাখুন। যেমন ধরুন ২০ মিনিট পড়ার পর ১৫ মিনিটের ব্রেক নিন। তারপর আবার ২০ মিনিট পড়ার পর আবার ১৫ মিনিটের ব্রেক নিন।
এই প্রথম দিনে ৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করুন, যেখানে ২ ঘণ্টা আপনার পড়া হবে আর ২ ঘণ্টা হবে ব্রেক। তারপরের দিন এই ব্রেক টাইমটিকে একটু কমিয়ে দিন।
আমার কথার অর্থ হচ্ছে এই যে, আমরা বড় পড়ার টার্গেট তো অবশ্যই নিব কিন্তু শুরু করব ছোটো থেকে।
এভাবে পড়তে থাকলে আমাদের পড়ার প্রতি একটা অভ্যাস হয়ে যাবে। ফলে আমরা একটানা অনেকক্ষণ পড়তেও পারব।
২.বিছানা ত্যাগ করা:
বিছানায় বসে পড়াশোনা করাটা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এই বিছানায় বসে পড়লে ধীরে ধীরে আমাদের শুয়ে পড়তে মন চায়। আর কিছু সময় যাওয়ার পর আমাদের চোখে ঘুম চলে আসে।
তাই বিছানায় পড়ার চেয়ে চেয়ার-টেবিলে বসে পড়া অনেক বেশি effected। আবার পড়তে বসার পর মনে হয় যে, "যাহ!!!কলমটিই তো নিয়ে বসিনি বা আমার রুলার টা যে কোথায় বা অনেক পিপাসা লেগেছে।"
এসবের জন্য আমাদের অনেক বার পড়া থেকে পড়া থেকে উঠতে হয়।ফলে পড়া থেকে আমাদের concentration টাই চলে যায়।
তাই পড়তে বসার আগে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বসতে হবে।
৩.পড়ার সময় যে নিয়ম অনুসরণ করতে হবে:
আমাদের সব ছাত্রেরই শরীর ও মস্তিষ্ক আলাদা হয়ে থাকে।তাই পড়ার সময়টাকে নিজেকেই বেছে নিতে হবে।
কেননা, কেউ হয়তো সকালে পড়তে পছন্দ করে, কেউ আবার সন্ধ্যা বেলায় পড়তে পছন্দ করে, কেউ আবার গভীর রাতে পড়তে পছন্দ করে।
তাই আমাদের নিজেদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে যে কোন সময় পড়লে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া যাবে, পড়ায় মন বসবে।
তাই পড়তে বসার সময়সূচী বানানোর সময় এই বিষয়টিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
৪. দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা:
পড়ার সময় অনেক দুশ্চিন্তাই আমাদের মাথায় চলে আসে। যেমনঃ "কোনো সিলেবাসই তো এখনো শেষ করা হয়নি। এ বছর আমি নিশ্চিত ফেল করব।
এলাকার লোকের কাছে তো তাহলে মুখই দেখাতে পারব না ইত্যাদি। এসব চিন্তা করার ফলে পড়ার সময় নষ্ট হয়। তাই এসব চিন্তাকে নিজের মাথা থেকে একদম সরিয়ে ফেলুন এবং পড়ার টেবিলে নিজের মন সতেজ রাখুন।
কেননা পড়ার সময়টা বাজে নষ্ট না করে পড়ায় concentrate করলে লাভটা আপনারই হবে।তাই পড়ার সময় যতটা সম্ভব নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখুন।
৫.পড়াশোনার পরিবেশ:
প্রায় সময়ই পড়ার সময় আমরা নানভাবে শব্দ দূষণের শিকার হয়ে থাকি। ফলে পড়ায় আমাদের মনোযোগ আমাদের নষ্ট হয়ে যায়।
তাই পড়ার সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে হোয়াইট নয়েজ সাউন্ড শোনা। হোয়াইট নয়েজ এমন একটি সাউন্ড যেটি অনেকগুলো সাউন্ডের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট সাউন্ডের উপরই আপনার ফোকাস রাখতে সাহায্য করে এবং তার সাথে আমাদের concentration বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে অধিক শব্দ দূষণের ক্ষেত্রেই হোয়াইট নয়েজ প্রযোজ্য এবং এটি ব্যবহারে অবশ্যই সৎ হতে হবে। কেননা, অনেকে পড়ার সময় হোয়াইট নয়েজ না শুনে আবার সেই মোবাইলই চালাবে। ফলে পড়াশোনা কিছুই হবে না।
Tags:
Life Hacks