পাখির প্রথম উড়তে শিখার ইতিহাস ও রহস্য!

পাখি কিভাবে উড়ে, পাখির উড়তে পারার ইতিহাস

পাখির উড়তে শিখার আদ্যোপান্ত

লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর আকাশে এভাবে একটাও পাখি উড়ে বেড়াতো না। এক ধরনের চারপেয়ে জন্তু ছিল। পতঙ্গ ছিল তাদের প্রিয় খাদ্য।


এরা পতঙ্গ ধরার জন্য প্রচণ্ড বেগে ছুটে ধাওয়া করত এবং লাফ দিয়ে ধরে ফেলত পতঙ্গ। এদের পেছনের পা দুটো সামনের পা বা হাতের তুলনায় ছিল বেশ লম্বা।


ছােটার সময় সামনের হাত দুটো দু পাশে ছড়ানাে থাকত। পেছনের পালক গজাতে লাগল। আর আগের মতাে ছুটতে গিয়ে বাতাসের ধাক্কায় আকাশে ভেসে উঠল । এভাবেই পৃথিবীর প্রথম পাখিরা উড়তে শেখে।

নৌকা চালাবার সময় দাঁড় বাওয়ার সাথে পাখিদের ওড়ার মিল রয়েছে। দাঁড়গুলােকে পানির স্রোতে পেছনের দিকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে চলার গতিবেগ সৃষ্টি করতে হয়। পাখিরাও উপরে নিচে ডানার ঝাপটা দিয়ে এগিয়ে চলে। 

উপরে নিচে পাখা সঞ্চালনের মাধ্যমে অত্যন্ত তাড়াতাড়ি পালকগুলােকে মুচড়ে দিয়ে বাতাসকে পেছন দিকে ঠেলে দেয়। এভাবে বাতাস কেটে এগিয়ে চলে। 

লেজকে আঁকিয়ে বাঁকিয়ে বিভিন্নভাবে দিক পরিবর্তন করা হয়। বিভিন্ন গােষ্ঠীর পাখি বিভিন্নভাবে ওড়ে। কেউ ওড়ে আকাশের বুকে ঢেউ তুলে। 

কেউ ওড়ে সমান্তরালভাবে। আবিষ্কৃত হয়েছে আরকিওপটেরিক্স নামক প্রাগৈতিহাসিক প্রাক পক্ষীর ফসিল । এই ফসিল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান জন অস্ট্রোম পাখিদের ওড়া শেখার এই তত্ত্বটি খাড়া করেছেন।

কিছু কিছু পাখির উড়তে না পারার কারণ -

আহারের জন্য পাখিরা দূর দূর এলাকায় উড়ে যেতে পারে। অনায়াসেই পেরিয়ে যায় বিশাল পাহাড় কিংবা উত্তাল সমুদ্র। পাখিদের বেশিরভাগই চেষ্টা করত তাদের পাখনাকে সবল করতে। 

এর ফলে বেড়ে যাবে ওড়ার গতি । কিন্তু অনেক পাখি পেয়ে গেল প্রচুর খাবার। তাদের হতে হলাে না তেমন শত্রুর সম্মুখীন। 

ফলে পাখার কাজও তেমন বেশি করতে হয়নি। এর ফলে তাদের শরীর ক্রমশ বেশ ভারি আর বড় হয়ে উঠতে লাগল। ধীরে ধীরে পাখার ব্যবহার হারিয়ে ফেলল তারা। এ সব পাখির পা হয়েছে ভীষণ শক্তিশালী। 

তাই এরা দৌড়াতে পটু। উটপাখি, ক্যাসােওয়ারী, এমু,অস্ট্রিচ কিংবা গৃহপালিত হাঁসমুরগি হলাে উড়তে না পারার দলের।

পাখির বিভিন্ন ভাবে উড়ে চলা-

নৌকাজ, ঈগল, কাক, চিল, শকুন, পানকৌড়ি ইত্যাদি পাখিরা অনেকক্ষণ ডানা ঝাপটা না দিয়ে মুক্তপক্ষে ভেসে যেতে পারে। যাযাবর পাখিরা ওড়ে ঝাকবেঁধে। 

দলবেঁধে ওড়া এ শ্রেণীর পাখিদের পক্ষে অনেক সােজা। আর এতে উড়তেও পারে তাড়াতাড়ি। দেখা গেছে কোনাে দলে যদি পঁচিশটি পাখি থাকে এবং যদি ইংরেজি ভি-আকারে দলবেঁধে ওড়ে তবে তাদের গতিবেগ শতকরা সত্তর ভাগ বেড়ে যায়। 

এর মানে একটি পাখি যদি ঘণ্টায় দশ মাইল যায় তবে ভি আকারের দলে উড়ে সে যেতে পারবে সতেরাে মাইল। কারণ এ-ভাবে দল বাঁধলে বাতাসের স্রোতকে অনেকটা কাজে লাগান যায়। পাখির ওড়ার ক্ষমতা অনেক পরিমাণে তার ডানার দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভরশীল ।

বিভিন্ন ধরনের পাখি-

সবচাইতে দ্রুতগামী পাখি হলাে পেরিগ্রিন নামের বাজপাখি । শিকার ধরবার সময় তারা উল্কার বেগে নিচু দিকে ছোঁ মারার ভঙ্গিতে ছুটে যায়। 

তখন তাদের গতিবেগ হয় ঘণ্টায় প্রায় ২৮০ মাইল ।পৃথিবীর সবচাইতে ছোটো  পাখি হলাে হামিং গােষ্ঠীর মধুচোষা পাখি এরা ওড়বার সময় এত দ্রুতবেগে পাখা ঝাপটাতে থাকে যে তা থেকে গুনগুন করে শব্দ হয়। 

এদের গতিবেগ ঘণ্টায় পঞ্চাশ থেকে ষাট মাইল। এদের রয়েছে একটি বিশেষ ক্ষমতা। পাখিদের মধ্যে এরাই পেছনের দিকে উড়তে পারে। 

প্রয়ােজন হলে শূন্যে একই স্থানে স্থির হয়ে থাকতে পারে। সমুদ্রের অ্যালবাট্রস পাখির ডানা সবচাইতে দীর্ঘ। তাদের ডানা এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত এগার ফুট।

১৯২১ সালে এভারেস্ট অভিযানকারী ব্রিটিশ দলের সদস্য ডাক্তার ওলাপস্টেন প্রায় পঁচিশ হাজার ফুট উঁচুতে একটি শকুনকে দেখতে পেয়েছিলেন। 

একজন বিশেষজ্ঞ বক ও সারস পাখিদের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কুড়ি হাজার ফুট উপরে হিমালয় পার হয়ে উড়ে যেতে দেখেছেন। ১৯৬২ সালে একুশ হাজার ফুট উচ্চে একটি মার্কিন বিমানের সঙ্গে একটি বুনােহাঁসের ধাক্কা লেগেছিল।

পাখিরা আমাদের প্রকৃতিরই একটা অংশ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও এদের ভূমিকা অনেক। তবে আমাদেরই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। এদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমার, আপনার, আমাদের সবার।

Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post