বিস্ময়কর জীব:বৈদ্যুতিক ঈল

ইলেকট্রিক ইল, ঈল মাছ

বিদ্যুৎ মৎস্য বা  Electric Eel এর পরিচয়-

এক-একরকম জানােয়ারের এক-একরকম অস্ত্র। কেউ শিং দিয়ে গুঁতায়, কেউ নখ দিয়ে আচঁড়ায়, কেউ দেয় দাঁতের কামড়, কেউ মারে হুলের খোঁচা।

ক্যাঙারুর ল্যাজের ঝাপটা, ঈগলের ধারাল ঠোঁট, অস্ত্র হিসাবে এগুলিও বড় কম নয়। কিন্তু তার চাইতেও আশ্চর্য অস্ত্র আছে একরকম বান্ মাছের গায়ে।

তােমরা কেউ ব্যাটারির 'শক' খেয়েছ? কিংবা খোলা বিদ্যুতের তারে ভুলে হাত দিয়েছ কি? এই মাছকে ধরতে গেলে গায়ের মধ্যে ঠিক তেমনি ধাক্কা লাগে।এই অদ্ভুত মাছকে ইংরেজিতে বলে Electric Eel অর্থাৎ 'বৈদ্যুতিক ঈল'।

বান মাছের মতাে চেহারা, সাপের মতাে লম্বা, ধারাল দাঁত—এক একটি ঈল পাঁচ ছয় হাত পর্যন্ত বড় হয়।এই জাতীয় মাছ পৃথিবীর নানা স্থানে পাওয়া যায়, কিন্তু যেগুলিতে বিদ্যুতের তেজ দেখা যায় সেগুলি থাকে কেবল আমেরিকার বড় বড় নদীর ধারে কাছ।

এক একটা ঈলের এমন আশ্চর্য তেজ, তারা বিদ্যুৎ চালিয়ে অন্য মাছদের ত মেরে ফেলেই, এমনকি, বড় বড় জানােয়ারগুলােকেও এক-এক সময় তারা অস্থির করে তােলে।

গরু, ঘােড়া পর্যন্ত কত সময়ে জল খেতে নেমে ঈলের পাল্লায় পড়ে যন্ত্রণায় লাফালাফি করতে থাকে। সে দেশের লােকেরা রীতিমত বর্শা বল্লম নিয়ে এই মাছ শিকার করে কারণ, কোনরকমে তার গায়ে গা ঠেকলেই বড় বড় জোয়ান মানুষকেও বাপরে মারে করে চেঁচাতে হয়।

একবার কতগুলাে ঘােড়া বিলের মধ্যে জল খেতে গিয়েছিল । সেখানে প্রায় ৪০-৫০টা বড় বড় ঈল এক জায়গায় জড়াে হয়েছিল। ঘােড়াগুলাে তার মাঝখানে পড়েই চিৎকার করে লাথি ছুঁড়ে ডাঙায় পালিয়ে আসল। 

কিন্তু একটা ঘােড়া তার মধ্যে একটু বেশি কাহিল হয়েছিল, সেটা অনেক ক্ষণ পর্যন্ত জলের ধারে আধমরা অবস্থায় পড়েছিল। ঈলগুলােও অবশ্য লাথির চোটে সেখানে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি।

বিদ্যুৎ মৎস্যের বৈদ্যুতিক অস্ত্র কি?

এই সাংঘাতিক অস্ত্র এরা কেমন করে ব্যবহার করে, আর কেমন করে তাদের শরীরের মধ্যে এতখানি বিদ্যুৎ সঞ্চিত হয়, তা এখনও পণ্ডিতেরা খুব স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।

মাছটাকে ধরে চিরলে পরে দেখা যায়, তার শিরদাড়ার দুই পাশে পিঠ থেকে ল্যাজ পর্যন্ত ছােট ছােট কোষ, তার মধ্যে একরকম আঠাল রস এইটিই তার বৈদ্যুতিক অস্ত্র ।

অস্ত্রের ব্যবহার করতে হলে সে কেবল তার শরীরটাকে ঝাকিয়ে ল্যাজ আর মাথা শত্রুর গায়ে ঠেকিয়ে দেয়।

কয়েকবার ক্রমাগত অস্ত্রের ব্যবহার করলে মাছটা আপনা থেকেই কেমন নির্জীব হয়ে পড়ে-তখন আর তার বিদ্যুতের তেজ থাকে না। কিন্ত খানিকক্ষণ বিশ্রাম করলে। আবার তার তেজ ফিরে আসে।

সব সময়ে যে ইচ্ছা করে সে খামখা অস্ত্র ব্যবহার করে তা নয় কোনরকম ভয় পেলে বা চমকালেও তার গায়ে বিদ্যুৎ খেলে। এরকম বৈদ্যুতিক শক্তি আরও কোন কোন মাছেরও অন্য জলজন্তুর মধ্যেও দেখা যায়।

আফ্রিকায় মাগুর জাতীয় একরকম মাছ আছে, তারও তেজ বড় কম নয়। তার সমস্ত শরীরটাই যেন বিদ্যুতের কোষে ঢাকা।

একটা চৌবাচ্চায় অন্যান্য মাছের সঙ্গে একে রাখলে তবে এর মেজাজের পরিচয় পাওয়া যায় দুদিন না যেতেই দেখবে যে আর সব মাছকে মেরে সে সাবাড় করেছে। আফ্রিকার আরবেরা এর নাম বলে রাদ’ অর্থাৎ বজ্র মাছ।

Post Author: Iftekhar Hossain Labib  



Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post