ছত্রাক বা মাশরুম কী?এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের মাশরুম

Mushroom,various types of mushroom
ছত্রাক শব্দটির সাথে আমরা কম-বেশি পরিচিত।আসলে,ছত্রাক এক ধরনের উদ্ভিদ,যার দেহ মূল,কান্ড ও পাতায় বিভেদিত নয়।ছত্রাকের আভিধানিক অর্থ 'মাশরুম' বা ব্যাঙের ছাতাসদৃশ বস্তু।পৃথিবীতে প্রায় ১৪০০০ প্রজাতির ছত্রাক শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ প্রজাতির ছত্রাক অন্ধকারে জন্মায়।আর,৭৫ প্রজাতির ছত্রাক অন্ধকারে জলজল করে। ধারণা করা হয়,পৃথিবীতে ১৫ লাখ প্রজাতির ছত্রাক আছে।ছত্রাকের প্রায় ৯০ শতাংশই পানি।ছত্রাক সাধারণত সেঁতসেঁতে, আর্দ্রতাপূর্ণ ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে। এদের দেহে কোনাে ক্লোরােফিল থাকে না বলে এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না। এরা পরজীবী, মৃতজীবী বা মিথােজীবী এবং শােষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে। অধিকাংশ ছত্রাক এক রাতের মধ্যেই উৎপাদিত হতে পারে। অর্থাৎ খুব দ্রুততার সাথে এদের বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটতে পারে।তবে অধিকাংশ প্রজাতির ছত্রাকের বৃদ্ধি ধীর গতিসম্পন্ন।

ছত্রাকের উপকারিতাঃ

ছত্রাকের রয়েছে বিভিন্ন উপকারী দিক।বেশ কয়েক প্রজাতির ছত্রাক মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।ছত্রাকে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও প্রােটিন জাতীয় খাদ্য উপাদান এবং নানা ধরনের খনিজ লবণ থাকে। কিছু প্রজাতির ছত্রাক বিষাক্ত। নানা প্রকার ঈস্ট জাতীয় ছত্রাক মদ, পাউরুটি, কেক, পনির ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ছত্রাক থেকে বিভিন্ন রকমের অ্যান্টিবায়ােটিক (জীবাণু প্রতিরােধী) উৎপাদন করা হচ্ছে। ১৯২৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম 'পেনিসিলিয়াম নােটাটাম' নামক ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়ােটিক আবিষ্কার করেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত রােগ নিরাময়ের জন্য বর্তমানে যেসব অ্যান্টিবায়ােটিক ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে তার অনেকগুলােই ছত্রাকজাত। সেপটোমাইসিন, ক্লোরােমাইসিটিন, নিউমাইসিন, অফিসিলিন অরিওমাইসিন ইত্যাদি অ্যান্টিবায়ােটিক ছত্রাক থেকে প্রাপ্ত। ছত্রাক থেকে Ergot তৈরি হয়, যা বিশেষ করে সন্তান প্রসবের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হয়।এছাড়াও কিছু কিছু দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস ছত্রাক।

ছত্রাকের অপকারিতাঃ

ছত্রাকের যেমন নানাবিধ উপকারি দিক আছে তেমনি অনেক অপকারি দিকও আছে।ছত্রাকের কিছু কিছু প্রজাতি মানুষ ও গৃহপালিত পশু এবং অন্যান্য প্রাণীদেহে নানাবিধ রােগ সৃষ্টি করে।বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে মানুষের খুশকি, একজিমা, চুলকানি প্রভৃতি রােগ সৃষ্টি হয়। ছত্রাকের আক্রমণে মানুষের মাথার চুল পড়ে যায় এবং টাক পড়ে।এমনকি,কিছু কিছু ছত্রাকের কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।ছত্রাকের কারণে ধানের পাতায় বাদামি দল রােগ হয়। ১৯৪২ সালে তৎকালীন বাংলায় মহাদুর্ভিক্ষ হয়েছিল ধানের পাতার বাদামি রোগের কারণে।

চেনটেরেলেস ছত্রাকঃ

চেনটেরেলেস ছত্রাক পৃথিবীর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার উপযােগী ছত্রাক। অপূর্ব স্বাদ এবং দেখার সৌন্দর্যের কারণে এটি খুবই জনপ্রিয়। খাবার উপযােগী চেনটেরেলেস ছত্রাকের অনেকগুলাে প্রজাতি আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়টি হলাে চেনটেরেলেস সিবারিয়াস (সােনালি চেনটেরেলেস ছত্রাক)।চেনটেরেলেস ছত্রাকের টুপিটি অনেকটা ফুলদানির মতাে এবং এর রং হয় হলুদ থেকে হলুদ-কমলা।এর কাণ্ড মসৃণ। কাণ্ডের ভেতর ফাপা নয়।চেনটেরেলেস
ছত্রাকে ভিটামিন সি এবং উচ্চ মাত্রায় ক্যারােটিন আছে।

হাইডনেলাম পেকিঃ

হাইডনেলাম পেকি একটি বিশেষ ধরনের ছত্রাক। এ ছত্রাকটি এর পৃষ্ঠদেশ থেকে রক্ত অথবা রসালাে ধরনের তরল নিঃসরণ করে। এ কারণে এ ছত্রাকটি ‘রক্ত ঝরানাে দাত ছত্রাক’ নামেও পরিচিত। এই আশ্চর্য রকম উদ্ভিদটি মূলত উত্তর আমেরিকা এবং ইউরােপে দেখা যায়। এ ছত্রাকটি খাওয়ার উপযােগী।তবে এর রক্তিম তরল পদার্থটি অত্যন্ত তেতাে স্বাদের হয়।

ইন্ডিগো মিল্কক্যাপঃ

নীল বা বেগুনি রঙের টুপি মাথার অপরূপ সুন্দর ছত্রাকটি পূর্বাঞ্চলীয় উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ার বনে দেখা যায়। যখন এ ছত্রাকটি কাটা হয় অথবা ভাঙা হয় তখন তা থেকে দুধ বা রঞ্জক বের হয়, যা দেখতে আকাশি নীল রঙের মতাে দেখায়। এটি দেখতে বিষাক্ত মনে হলেও আসলে বিষাক্ত নয়। এ ছত্রাকটি খাওয়ার উপযােগী এবং এটি কিছু বাজারে বিক্রি হয়।

ডেথ ক্যাপঃ

ডেথ ক্যাপ ছত্রাকটি দেখতে খুব সুন্দর। ছাতার আকৃতির সাদা রঙের এ ছত্রাকটি দেখে মনে হয় না যে, এতে বিষ আছে। কিন্তু এটি খুবই মারাত্মক একটি ছত্রাক।এতে অ্যামানিটিন এবং ফ্যালােইডিন নামক বিষ রয়েছে। এটি খেলে মানুষের কিডনি ও যকৃৎ নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ৫৪ খ্রিষ্টাব্দে রােমান সম্রাট ক্লাওডিয়াস এবং ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে রােমান সম্রাট ষষ্ঠ চার্লস এ ছত্রাক খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

বোলেট ছত্রাকঃ

বহুমুখী, চটচটে এবং বড় আকারের বােলেট ছত্রাক যুক্তরাজ্য, ইউরােপ,সাইবেরিয়া এবং চীনের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। এ ছত্রাকের উজ্জ্বল বাদামি রঙের স্পঞ্জের মতাে বড় টুপিটি দূর থেকে পাউরুটির মতাে দেখা যায় বলে যুক্তরাজ্যে এটি ‘পেনি পাউরুটি’ নামে পরিচিত।এছাড়া যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সে বােলেট ছত্রাককে ‘সেপ’ নামেও ডাকা হয়। বােলেট ছত্রাক সাধারণত দলবদ্ধভাবে জন্মায়। বােলেট ছত্রাকের বড় আকারের মসৃণ এবং উজ্জ্বল টুপির কিনারাটি সাদা রঙের হয়। এর দণ্ডটি কাষ্ঠল এবং সাদা রঙের। বােলেট ছত্রাকে সহজে হজমযােগ্য প্রাকৃতিক প্রােটিন রয়েছে। এছাড়া এটি খনিজ পদার্থ, যেমন- সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ,জিঙ্ক, কপার, আয়ােডিন ইত্যাদির একটি উত্তম উৎস।

পাফবল ছত্রাকঃ

পাফবল ছত্রাকের ওপরিভাগে বলের মতো একটি বীজকোষ আছে। বড় আকারের পাফবলের এ বীজকোষটির ব্যাসার্ধ হয় প্রায় ১ ফুট।একটি বৃহদাকার পাকবল ছত্রাক ৭ ট্রিলিয়ন বীজ উৎপন্ন করতে পারে।এটি ফাটলে ভেতর থেকে ধোঁয়ার মতাে বের হয়। এ ছত্রাকটি বিশ্বব্যাপী খাওয়া হয়। তবে সব পাফবল ছত্রাক খাওয়া হয় না এবং সব পর্যায়ের পাফবল ছত্রাক খাওয়াও যায় না। এটি যখন ছোট এবং সাদা অবস্থায় থাকে তখনই কেবল খাওয়া হয়। বড় হয়ে যখন বাদামি রং ধারণ করে তখন খাওয়া হয় না।যুক্তরাজ্যে প্রায় সব সত্যিকারের পাফবল ছত্রাকই খাওয়ার উপযােগী।এগুলাে সারা বছরই জন্মায়। কিছু পাকবল ছত্রাক খুবই সুস্বাদু।তিব্বতে ঐতিহ্যবাহী কালি তৈরিতে পাফবল ছত্রাক ব্যবহৃত হতাে।

মোরেল ছত্রাকঃ

মােরেল পৃথিবীর বন্য ছত্রাকগুলাের মধ্যে অন্যতম মনােহর ছত্রাক।এর মাথায় কিছুটা কুঁচকানাে গাঢ় বাদামি রঙের টুপি আছে। মােরেল ‘ড্রাইল্যান্ড ফিশ’, ‘হিকোরি চিকেন’, ‘স্পঞ্জ মাশরুম’ ইত্যাদি নামেও পরিচিত।মােরেল রান্না করে খাওয়া হয়,কখনােই কাঁচা খাওয়া হয় না কারণ এতে সামান্য পরিমাণ বিষ থাকে। রান্না করে খেলে বিষক্রিয়া থাকে না। এ ছত্রাকগুলাে বেশিরভাগ মুদি দোকানের ছত্রাকের মতাে চাষ হয় না। এগুলাে বন্য অবস্থায় জন্মায়। এগুলাের আকার আঙুলের মাথা থেকে হাত পরিমাণ হতে পারে। মােরেল যেহেতু চাষ করা হয় না, সেহেতু খাওয়ার জন্য এটি খুবই মূল্যবান একটি ছত্রাক।
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post