রাগ কমানোর ও নিয়ন্ত্রণ করার ৩টি উপায়!

anger,রাগ
রাগ কমানোর বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার অনেকগুলো উপায় রয়েছে। রাগ অন্যান্য ইমোশনগুলোর মতোই স্বাভাবিক একটি ইমোশন। যা একটি নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত আমাদের জন্য ভালো।

যেমন কোনো একটা কাজের জন্য আমাদের Energise বা কর্মশক্তি প্রদান করা। সাহসের অভাবে জরুরী কিছু না বলা কথাগুলো বলে দিতে সাহায্য করা ইত্যাদি। বলতে পারেন এগুলো রাগের ভালো দিক। কিন্ত আবার রাগের লিমিট পেরোলেই এর চেয়ে খারাপ ইমোশন বোধহয় আর কোনোটিই নেই। মাত্রাতিরিক্ত রাগ আমাদের ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে তোলে, হার্টের ক্ষতি করে, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সম্পর্ক খারাপ করে এবং জীবনের আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেগেটিভলি প্রভাব ফেলে। ভাবতে পারেন টয়লেটের মতোই রাগ যদি ভুল সময় ভুল জায়গায় চলে আসে তাহলে প্রচুর সমস্যা তৈরি করে। তাই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল। আজকে আমি আপনাদের এই রাগ নিয়ন্ত্রণ করারই ৩টি উপায় বলব। তো চলুন শুরু করা যাক-

রাগ কমানোর প্রথম উপায় : 3 Seconds Rule

সাইন্টিফিক রিসার্চ থেকে জানা গেছে রাগ বেরিয়ে আসার আগে আমরা যে অসহ্যকর মতো একটা অনুভূতি অনুভব করি তা স্থায়ী হয় মাত্র ২.৫ সেকেন্ড। এই ২.৫ সেকেন্ডে আমরা যদি আমাদের রাগ প্রকাশ করে ফেলি তাহলে এই অনুভূতিটা বারবার নতুন করে তৈরি হতে থাকে। আর কোনো রকম react বা প্রতিক্রিয়া না করে আমরা যদি এই ২.৫ সেকেন্ড কোনো ভাবে কাটিয়ে দিতে পারি তাহলে ঐ অনুভূতিটা আমাদের বারবার তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না এবং আমরা নিজেদের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। 

আর এই কাজটি করার জন্য আপনাকে 3 seconds rule ফলো করতে হবে। অর্থাৎ যখনি রাগ শুরু হওয়ার আগে আপনি ঐ অনুভূতিটা বুঝতে পারবেন তখনি নিজেকে ৩ সেকেন্ডের জন্য একটা বিরতি দিবেন। এরজন্য নিজের সুবিধামতো যেকোন একটা কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। এটা হতে পারে ১০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টো ভাবে গোনা অথবা ৩ বার দীর্ঘ শ্বাস নেওয়া। এটা দুটো মাত্র পদ্ধতি আপনি নিজে থেকেও এরকম অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারবেন। যেমন দূরের কোনো একটা জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকা বা মিথ্যে একটা হাসি দেওয়া। যেটাই আপনি করেন না কেনো আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে ৩ সেকেন্ড কোনো ভাবে কাটিয়ে দেওয়া।  

এটা হচ্ছে সাময়িক একটা সমধান কিন্ত আমরা যদি স্থায়ীভাবে রাগ কমাতে চায় বা গোড়া থেকে রাগকে উপড়ে ফেলতে চায় তাহলে সেটার সমাধান কী?

রাগ কমানোর ২য় উপায় : Exercise বা ব্যায়াম  

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল নিয়ে বসে পড়ুন। সারাদিন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকিং করতে থাকুন। ল্যাপটপে মুখ গুজে, টিভি দেখে, উল্টো-পাল্টা মুভি দেখে কাটিয়ে দিন। তারপর সন্ধ্যাবেলা দেখুন আপনার মেজাজ কেমন থাকে। স্বাভাবিক হাসি খুশি থাকে নাকি খিটখিটে।

অন্যদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালো নাস্তা করে এক্সারসাইজ করুন, পার্কে গিয়ে হেটে আসুন এবং এমন কোনো একটা কাজ করুন যা আপনি করতে ভালোবাসেন। এভাবে দিনটাকে কাটান এবং সম্ভব হলে বিকেলের দিকেও অল্প সময়ের জন্য এক্সারসাইজ করুন। সন্ধ্যাবেলায় ফ্রেশ হয়ে বসে একবার ভাবুন আজ আপনার মেজাজ কেমন আছে? খিটখিটে নাকি হাসিখুশি? 

কারও কথায় বিশ্বাস করার কোনো দরকার নেই৷ আপনি নিজেই দুদিন দুরকম চেষ্টা করে দেখুন।  

এক্সারসাইজ করার ফলে আমাদের দেহে Endorphins নামক হরমোন তৈরি হয় এটাকে Feel good হরমোনও বলা হয়। কারণ এই হরমোন আমাদের স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। আর মন ভালো থাকলে রাগ উঠার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। তাই না?

রাগ কমানোর ৩য় উপায় : সঠিক খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম

অনেকেই এই জিনিস দুটো জিনিসকে ভীষণ ভাবে অবমূল্যায়ন করে। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে, সময়মতো খাবার না খেয়ে কাটান আর এরপর এটি নিয়ে অস্বস্তিবোধ করেন যে, আমি অল্পতেই রেগে যাচ্ছি কেন? খাওয়া আর ঘুম যদি আমাদের সঠিকমাত্রায় সঠিকভাবে না হয় তাহলে যে আমাদের মেজাজ খিটখিটে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।   

বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি আমরা সবাই জানি ও বুঝি। তবুও আজকের এই ব্যস্ততার যুগে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ দুটো জিনিসকেই সবচেয়ে বেশী আপোষ করি। সকাল ৭ টায় উঠে অফিস বা কলেজ যেতে হবে যেনেও আমরা রাত ২-৩ টা পর্যন্ত মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকি। তারপর রাতে অর্ধেক ঘুম ঘুমিয়ে নাস্তা যা কিনা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার তা অনেক সময় না খেয়েই চলে যায়। রোজ এই একই কাজ করার পরও আমরা আশা করি একটি সুস্থ মন আর সুস্থ শরীরের। তা কীভাবে সম্ভব তা হয়তো শুধু আমি না বরং কেউই বলতে পারবে না। 

যদি আমরা সত্যিই একটি সুস্থ সুন্দর মন চায়, আমাদের স্ট্রেস, রাগ, নেগেটিভ ইমোশন ইত্যাদি যদি সত্যিই একদম গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে চায় একদম স্থায়ী ভাবে তাহলে তার একটাই উপায় আর তা হলো নিজের মন এবং শরীরকে সুস্থ রাখা। আর সেটা সম্ভব নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম, সঠিক সময়ে সঠিক খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে। মাত্র তিনটি জিনিস যেখানে কোনো রকম আপস করা ঠিক নয় কিন্তু মজার ব্যাপার এই তিনটি জিনিসেই আমরা সবচেয়ে বেশী আপস করি। যার ফলে আমাদের মেজাজ দিনদিন আরও খারাপ হয়ে উঠছে।   

Anger বা রাগ নিয়ে বুদ্ধার একটি উক্তি: "Holding onto anger is like drinking poison and expecting the other person to die"

Feature Image Source: shutterstock.com                                      
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post