ডলফিন এবং তিমিদের ভাষা রহস্য!

language of dolphins,whales

ডলফিনের কি নিজস্ব কোনাে ভাষা রয়েছে? 

এই রহস্য উদঘাটনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা ডলফিন যে উন্নত মানের শব্দ বিচ্ছুরণ করে, সেগুলাে কে সংকেতে রূপান্তরের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের ধারণা, ডলফিনের এসব শব্দকে কোনো গােপণ ভাষা হিসেবে তৈরি করা সম্ভব হলে সাগরতলের অনেক কিছুই জানা যাবে। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউআলাে বেসিন মেরিন ম্যামাল ল্যাবের  (Kewalo Basin Marine Mammal Lab) গবেষক লুইস হারমান অবশ্য স্বীকার করেন না যে, ডলফিনের নিজস্ব কোনাে ভাষা রয়েছে। তিনি তাঁর ল্যাবে চারটি ডলফিনকে কৃত্রিম ভাষা শিখিয়েছিলেন। এজন্য তিনি দুটি বিষয় নির্বাচন করেছিলেন। একটি হলাে দর্শনীয় বিষয় এবং অপরটি হলাে শব্দ। হাত ব্যবহার করে নির্দেশ দিয়ে তিনি ডলফিনদের বল তােলা বা খেলার নির্দেশ দিতেন এবং বিভিন্ন মাত্রার বৈদ্যুতিক শিস দিয়ে তিনি তাদের সঙ্গে যােগাযােগের চেষ্টা করতেন।

তিমিগােষ্ঠীর প্রাণীরা নিজেদের মধ্যে কিভাবে যােগাযোগ করে? বিজ্ঞানীদের চিন্তায় এ বিষয়টিও বিশেষ কাজ করেছে। সাধারণভাবে জলের নিচে শব্দ অনেকটা দূর পর্যন্ত যায়। মানুষ এসব শব্দের উৎস সঠিক অনুধাবন করতে পারে না। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পালন করা ডলফিনদের মধ্যে কোনটি শব্দ করেছে তা ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না, কারণ এরা শব্দ করার সময় ঠোঁট নাড়াচাড়া করে না।

উডস হােল ওসেনােগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন (Woods Hole Oceanographic Institution)-এর তিমি গবেষক পিটার তায়েক (Peter Tyack) একটি ডাটালগার তৈরি করেছেন। 

এটি প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের কম্পিউটার ভিত্তিক যন্ত্র যার মাধ্যমে গবেষণাগারে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শব্দ সঠিকভাবে রেকর্ড করতে পারে। ডলফিন বা অনুরূপ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে বসানো ছােট ধরনের একটি মাইক্রোফোনের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটার খুব সহজেই এসব প্রাণীর তৈরি করা শব্দ রেকর্ড করতে পারে। প্রাণীরা সবচেয়ে জোরে যে শব্দ করে, তাকেই কথা বলা হবে হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তিমিগােষ্ঠীর প্রাণীরা কি সবসময়ই প্রতিধ্বনি নির্ণায়ক পদ্ধতি ব্যবহার করে? এই প্রশ্নটাও বিজ্ঞানীদের মনে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করেছে। তিমি গবেষকদের ধারণা, মুক্ত সাগরের তিমিগােষ্ঠীর প্রাণীর তুলনায় গবেষণাগারে রক্ষিত প্রাণীরা এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করে।

প্রায় সব তিমিই নিজেদের মধ্যে যােগাযােগের জন্য অনবরত শব্দ করতে থাকে। কিন্তু তারপরও তিমিগােষ্ঠীর কিছু কিছু প্রাণী সবসময়ই প্রতিধ্বনি নির্ণায়ক পদ্ধতি ব্যবহার করে না। অনেকেই কেবল শব্দ শুনেই তাদের শিকার ধরে থাকে। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় দেখা যায়, স্পার্ম তিমি, রাইট তিমির মতো তিমিরা নৌকা বা জাহাজে আঘাত করেছে। প্রতিধ্বনি নির্ণায়ক পদ্ধতি ব্যবহার করলে তারা খুব সহজেই এসব জাহাজ এড়াতে সক্ষম হতাে।

ডলফিনরা পরিভ্রমণের সময় এই পদ্ধতি বন্ধ করে রাখে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। এ কারণে এরা এড়াতে না পেরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে বলে ধারণা করা হয়। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছে যে, তিমিগোষ্ঠীর প্রাণীরা নিজেদের মধ্যে যােগাযােগের জন্য বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যবহার করে। খুনী তিমি অনেকসময় বিলাপ ধ্বনি করে। পাখনা তিমি সবসময়ই প্রভুত্বশীল শব্দ ব্যবহার করে।

নীল তিমি শব্দ ছুঁড়ে ধাপে ধাপে। প্রথমে ২০ সেকেন্ড শব্দ করে এরপর ২০ সেকেন্ড থেকে থাকে তারপর আবার ২০ সেকেন্ড শব্দ করে- এভাবেই নীল তিমি
নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে।

গবেষণাগারে ডলফিনদের নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর গবেষণা করেছেন। এমনি এক গবেষণার কথা বলছি।

লিলি নামের একটি ডলফিন নিয়ে কয়েকজন বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। এসব গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা শুধু যে ডলফিন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন, তা নয় জলের গভীরের অনেক তথ্যও বিজ্ঞানীদের জানিয়েছে লিলি নামের এই ডলফিন।

লিলি মানুষের ভাষায় অনেকটা স্পষ্টভাবে অনেক কথা বলতে পারতাে। যাহােক, যে গবেষণাগারে লিলিকে নিয়ে গবেষণা চলছিল, সে লিলি ছাড়াও আরাে বেশ কয়েকটি ডলফিন ছিল। এই গবেষণারই এক পর্বে লিলি মারা যায়। বিজ্ঞানীরা পরদিন সকালে এসে লিলিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

খাঁচার সাথে সংযুক্ত টেপরেকর্ডাৱে বিজ্ঞানীরা একটি কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে যান। মারা যাওয়ার আগে লিলি গবেষণাগারের অন্যান্য ডলফিনকে উদ্দেশ্যে বলে যায়, "They deceived us" অর্থাৎ ওরা আমাদের বোকা বানিয়েছে। বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, এই ‘ওরা' কারা?

Feature image source: shutterstock.com
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post