৫টি বিষাক্ত উদ্ভিদ বা প্রাণঘাতী গাছ!

বিষাক্ত গাছ, প্রাণঘাতী উদ্ভিদ

গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই; যা ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে এমন কিছু বিষাক্ত গাছ রয়েছে আমাদের এ পৃথিবীতে যেগুলো আমাদের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। অর্থাৎ এই বিষাক্ত গাছ বা উদ্ভিদগুলো প্রাণঘাতী।

হয়ত, আমাদের আশে-পাশেও এমন গাছ রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ।তাই,আজকে বিষাক্ত কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

টমেটো গাছ

নামটি শুনে অনেকে আমাকে পাগল বলতে পারেন।কিন্তু সত্যিকার অর্থে, টমেটো গাছও বিষাক্ত উদ্ভিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। টমেটো গাছের পাতা,কান্ড এবং কাঁচা টমেটোতে স্বল্প পরিমাণে অ্যাল্কালয়িড টোমাটাইন নামক বিষ রয়েছে।অবশ্য পাতায় বিষের পরিমাণ খুবই কম।

টমেটোর কান্ড এবং পাতায় যে সোলানাইন নামক টক্সিনটি রয়েছে তা মানুষের হজমে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে এবং স্নায়বিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।

তবে ভেষজ চা হিসেবে যদি টমেটোর পাতা ব্যবহার করা হয় তাহলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।কুকুর যদি অধিক পরিমাণে টমেটো খায় অথবা টমেটো উদ্ভিদ চিবোয় তাহলে তাদের দেহে বিষক্রিয়া দেখা যায়।

রোডোডেন্ড্রন | Rhododendron

রোডোডেন্ড্রনের আদি নিবাস এশিয়া,তবে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানেই এ উদ্ভিদটি দেখা যায়।এটি একটি কাষ্ঠল উদ্ভিদ।এর লাল ও গোলাপি রঙের ফুলগুলো ভারি সুন্দর। এ উদ্ভিদটির সমস্ত অংশই বিষাক্ত।আর সে কারণে এ উদ্ভিদটি প্রাণীদের জন্য খুবই মারাত্মক। খ্রীস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে রোডোডেন্ড্রনের বিষ সম্পর্কে সর্বপ্রথম লেখা হয়।

এ উদ্ভিদটির যেকোনো অংশ ভক্ষণে বমি হয়,শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে,শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।উদ্ভিদটির ১০০-১২৫ গ্রাম পাতা খেলে ৫৫ পাউন্ড ওজনের শিশু মারাত্মক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।রোডোডেন্ড্রনের বিষ রক্তের চাপ কমিয়ে দেয় এবং এতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

ক্যাস্টর বীজ উদ্ভিদ | Ricinus (Castor Bean)
 
ক্যাস্টর বীজ উদ্ভিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত উদ্ভিদগুলোর একটি। এ উদ্ভিদটি ছোটোখাটো একটি গাছের সমান।এর উচ্চতা ৬-১৫ ফুট। চারটি ক্যাস্টর বীজের বিষে একজন সুস্থ-সবল প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যু অনিবার্য।

এর বীজে রিসিন নামে এক প্রকার বিষ থাকে,যে বিষ থেকে ক্যাস্টর অয়েল পাওয়া যায়। অবশ্য ক্যাস্টর তেল তৈরির সময় এ বিষ আলাদা করে ফেলা হয়।

ক্যাস্টর বীজের অতি অল্প মাত্রার বিষে তলপেটে তীব্র ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি দেখা দেয়।৭টি বীজে যে পরিমাণ বিষ থাকে তা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।এ উদ্ভিদটি কেবল এক বছর বেঁচে থাকে।

পুতুলের চোখ উদ্ভিদ | White Baneberry

পুতুলের চোখ উদ্ভিদটির আদি নিবাস উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব কানাডা। এটি একটি লতা-পাতা জাতীয় উদ্ভিদ।পুতুলের চোখ উদ্ভিদটি ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর সাদা রঙের ফলটি গােলাকার, ঠিক যেন পুতুলের চোখ।

খেতে অনেকটা জামের মতাে। পুতুলের চোখের মতাে দেখতে ফলের কারণেই উদ্ভিদটির নাম রাখা হয়েছে পুতুলের চোখ উদ্ভিদ।

ফলগুলাে দেখতে খুব সুন্দর হলে কী হবে, ফলসহ পুরাে উদ্ভিদটিই যে বিষাক্ত, বিশেষ করে মানুষের জন্য।এর ফল কার্ডিওজেনিক টক্সিন (এক ধরনের স্নায়ুবিষ) ধারণ করে, যা মানুষের হৃদপেশির টিস্যুতে তাৎক্ষণিক যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে এবং এটিই হলাে উদ্ভিদের সবচেয়ে বিষাক্ত অংশ।

এ ফলটি পাকস্থলিতে গেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পাখির জন্য পুতুলের চোখ উদ্ভিদের ফল যন্ত্রণাদায়ক নয়।বিষাক্ত এ উদ্ভিদটি ২ বছরের অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচে।

জিমপি জিমপি | Gympie Gympie

জিমপি জিমপি এক ধরনের নরম কাষ্ঠল উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও ইন্দোনেশিয়ায় জন্মায়। জিমপি জিমপি ‘হুলওয়ালা গাছ' নামেও পরিচিত।

উদ্ভিদটি সাধারণত ১৩ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে কিছু কিছু উদ্ভিদ মাত্র ০.৩ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর হুলযুক্ত ফল খাওয়ার উপযােগী। তবে খুব সাবধানে হুলগুলাে ফেলে খেতে হয়। জিমপি জিমপি উদ্ভিদের হুলগুলাে খুবই নরম, স্পর্শ করার সাথে সাথেই ভেঙে যায়।

হুলগুলাে খুবই বিষাক্ত। এগলাে মানুষের শরীরে শক্তিশালী বিষ ঢুকিয়ে দেয়।প্রাথমিকভাবে এর বিষে খুব একটা ব্যথা অনুভব হয় না।তবে ব্যথা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ব্যথা এমন পর্যায়ে যায় , যা সহ্য করা যায় না। মনে হয় যেন এর চেয়ে বেশি ব্যথা আর কোনাে কিছুতে নেই।

ত্বক লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যেতে থাকে। চোখ এবং নাকে পানি আসতে থাকে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ব্যথা মাসব্যাপী স্থায়ী হয়। মারাত্মক ব্যাপার হলাে, মৃত জিমপি জিমপি উদ্ভিদের হুলও জীবন্ত উদ্ভিদের হুলের মতােই বিষাক্ত। এর হুলের বিষ মানুষ, কুকুর এবং ঘােড়াকে মেরেও ফেলতে পারে। জিমপি জিমপি ২ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

হগউইড | Hogweed

হগউইড অত্যন্ত বিষাক্ত একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটি গাজর পরিবারের উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস এশিয়া। তবে বর্তমানে এটিকে ইউরােপ এবং উত্তর আমেরিকাতে সচরাচরই দেখা যায়। উনবিংশ শতাব্দীতে এ উদ্ভিদটিকে ইংল্যান্ডে নেওয়া হয় অলংকারিক গাছ হিসেবে।

হগউইড ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এ উদ্ভিদটির পাতা, কাণ্ড , মূল, ফুল এবং বীজে যে কষ রয়েছে তা খুবই বিষাক্ত। এর অল্প কয়েকটি ফোটা চোখে পড়লে চোখ চিরদিনের মতাে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই কষ মারাত্মক চর্মরােগের সৃষ্টি করে। কষ ত্বকে লাগলে ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সাধারণত ৪৮ ঘণ্টা পর ত্বকে গভীর ফোসকা পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই বাদামি রঙের ক্ষতচিহ্নে পরিণত হয়। ত্বক থেকে এ ক্ষতচিহ্নের দাগ,যেতে ৬ বছর সময় লাগে। হগউইড ৫ থেকে ৭ বছর বাঁচে।

আকন্দ উদ্ভিদ | Giant calotrope 

আকন্দ বড় আকারের গুল্ম জাতীয় বিষাক্ত উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস এশিয়া ও আফ্রিকা। এটি প্রায় ১৩ ফুট লম্বা হয়। আকন্দ উদ্ভিদ দুই ধরনের হয়- শ্বেত আকন্দ ও লাল আকন্দ। শ্বেত আকন্দ উদ্ভিদের ফুল সাদা আর লাল আকন্দ উদ্ভিদের ফুল বেগুনি রঙের হয়।

ফুটন্ত ফুলটি দেখতে ছােট আকারের মুকুটের মতাে। এর ফলটি সবুজ রঙের এবং ফলের অগ্রভাগ দেখতে অনেকটা পাখির ঠোটের মতাে। আকন্দ উদ্ভিদের পাতা ও কাণ্ডে বিষ রয়েছে। পাতা ছিঁড়লে বা কাণ্ড ভাঙলে তা থেকে দুধের মতাে কষ বের হয়। আর এ কষই হলাে বিষের ভাণ্ডার।

এই কষ তীরের বিষ, গবাদিপশুর বিষ এবং আত্মহত্যার বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কষ ত্বকে লাগলে ত্বক লাল হয়ে যায় এবং ফুসকুড়ি পড়ে। পাতা খেলে তেতাে লাগে এবং গলা ও পাকস্থলীতে জ্বালাপােড়া হয়, লালা নির্গত হয় , বমি হয়,ডায়রিয়া হয় এবং এক সময় মৃত্যুবরণ করতে হয়। এ বিষের প্রাণনাশক সময় মাত্র ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা।
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post