আমরা আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে যত জানার চেষ্টা করি। এটা আমাদের সামনে ততই আশ্চর্যজনক তথ্য এনে হাজির করে আমরা যখন প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি তখন আরো বেশি রহস্য আমাদের সামনে চলে আসে। বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরও মহাকাশের এমন অনেক রহস্য আছে যেগুলোর উত্তর এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ আমরা জেনে নেব মহাকাশের এমনই দশটি রহস্য যার উত্তর আমাদের কাছে অজানা। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক মহাকাশের রহস্যগুলোকে।
সুপারনোভা | Supernova
মহাকাশে হওয়া সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ সুপারনোভা তে হয়। এমন তখনই হয় যখন একটা বড় তারার ফুয়েল বা জ্বালানী শেষ হয়ে যায়। আর বিশাল বিস্ফোরন ঘটিয়ে তা ধ্বংস হয়ে যায়। এই বিস্ফোরণ এত বিশাল এবং উজ্জ্বল হয় যে এর আলোকবর্ষ দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে যেই সুপার নোভা কিভাবে কাজ করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অনেক বিষয় বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি। কিভাবে একটা তারা ফেটে যায়। তারাতে ঘটা বিস্ফোরণের পিছনে কি কি প্রক্রিয়া কাজ করে তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রবল উৎসাহী। বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন যে তার মধ্যে এমন কি কি ঘটে যার ফলে এটা সুপার নোভা হয়ে ফেটে যায়।
রিংস অফ স্যাটার্ন | Rings Of Saturn
শনি গ্রহের চারপাশে ঘিরে থাকা রিং বা বলয় সত্যি দেখার মতো জিনিস। অপূর্ব সুন্দর তার অবয়ব। যদিও অন্য আরো চার পাচটি গ্রহের রিং আছে। তবে শনি গ্রহের পৃথিবী থেকে খুব ভালোভাবে স্পষ্ট দেখা যায়।এই রিং খুব পাতলা এবং অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটা ধুলো,পাথর ও বরফ দ্বারা তৈরি।কিন্তু আজ পর্যন্ত এটা জানা যায়নি এই রিং এতো সুন্দর ভাবে কিভাবে তৈরি হলো। কিভাবে এত পাতলা রিং ফ্ল্যাট ভাবে অবস্থান করছে।ধারনা করা হয় এই রিং ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল।কিন্ত আজো আমরা জানতে পারিনি যে এটি কি কোন ধ্বংস হয়ে যাওয়া চাঁদের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি হয়েছিল নাকি অন্য কিছু। এটা নিয়ে এখানো গবেষণা চলছে। আশা করা যায় আগত সময়ে আমরা জানতে পারব ।
ডার্ক এনার্জি | Dark Energy
আমরা এটাকে দেখতেও পাইনা আবার অনুভবও করতে পারি না। আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে কেউ জানে না বাস্তবে এটা কি। যদিও ডার্ক এনার্জি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনেক অংশ জুড়ে অবস্থান করছে (প্রায় ৭২ শতাংশ)।আর এর কারণেই আকাশগঙ্গা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আজও খোঁজ চালাচ্ছেন যে ডার্ক এনার্জি কিভাবে তৈরি হলো, কোন জায়গা থেকেই বা আসছে।কেউ কেউ মনে করছেন কোয়ান্টাম পার্টিকেলের সংঘর্ষের ফলে এই শক্তি তৈরি হচ্ছে। তবে এই সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
এরিডেনাস সুপারভয়েড | Eridanus Supervoid
হাওয়াই ইউনিভার্সিটির(Hawaii University) কসমোলজি ডিপার্টমেন্টের এক টিম আমাদের ইউনিভার্সের একটি জিনিস খুজে পেয়েছেন। এটি আমাদের ইউনিভার্সের খুজে পাওয়া সবচেয়ে বড় জিনিস মনে করা হচ্ছে। এটি আয়তনে খুবই বড়।তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে এর মধ্যে কিছুই নেই। এটি একটি খালি জায়গা। এর নাম এরিডেনা সুপারভয়েড। আসলে এটি একটি মেগা ব্ল্যাকহোল। এর সামনে অন্যান্য ব্ল্যালহোলগুলো ছোট মনে হয়।আন্দাজ করা হচ্ছে এর ব্যাস এত বড় যে এটি পার করতে ১.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ লাগবে। অর্থাৎ আলোর গতিতে চললে তার একদিক থেকে অন্য দিকে পৌছতে ১৮০ কোটি বছর সময় লাগবে।এরিডেনা সুপারভয়েড আমাদের মিল্কিওয়ে থেকে তিন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। যা বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
গ্রাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ | Gravity
আপনার হয়তো মনে হচ্ছে গ্রাভিটি বিষয় টি বোঝা খুবই সহজ।এটা তো সবাই জানে। কিন্ত এটা বোঝা এতটাও সহজ নয়। বিজ্ঞানীরা আজও সম্পূর্ণভাবে ভাবে বুঝে উঠতে পারেননি যে গ্র্যাভিটি কিভাবে উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন আলোতে যেমন খুবই ক্ষুদ্র পার্টিকেলস ফোটন থাকে তেমনি মাধ্যাকর্ষণেও ক্ষুদ্র পার্টিকেলস থাকতে পারে যাকে গ্রাভিটনস বলে।কিন্ত গ্রাভিটি আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের চারটি মৌলিক বলের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হওয়ায় বিজ্ঞানীরা গ্রাভিটনসকে এখনও খুঁজে পায়নি।
উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মি কোথা থেকে আসে?
মহাজগতের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কসমিক রশ্মি প্রায়ই পৃথিবীতে আঘাত করে। এতে রয়েছে উচ্চগতির বিভিন্ন উপাদান যা মহাকাশ থেকে উড়ে আসে এবং কোনো কোনো সময় পৃথিবীতে এসে আঘাত করে। কম শক্তির কসমিক রশ্মি সূর্য থেকে আসে ।কিন্ত উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মি কোথা থেকে আসে তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা।
ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস কি?
অনেক ভাগ্যমান মহাকাশচারী মহাকাশে মিলিসেকেন্ডের রেডিও তরঙ্গের এক ঝলক শনাক্ত করতে পেরেছেন। একেই বলা হয় ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস। উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মির মতোই ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস কোথা থেকে আসে তার উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। তবে অনেকেই মনে করেন যেখান থেকে উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মি আসে সেখান থেকেই হয়তো ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস আসে।
মহাজগতের কতটুকো আমরা দেখতে পাই?
আমরা মহাজগতের যতটুকো দেখতে পেরেছি তা মাত্র ৫ শতাংশ আর বাকি ৯৫ শতাংশে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি। বিজ্ঞানীদের ধারণা ডার্ক এনার্জি এক রহস্যময় শক্তি যা মহাবিশ্বের আকার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। আবার একে আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটির এক বড় ভুলও বলা যায়। আমরা মহাবিশ্বের খুবই অল্প দেখতে পাই আর বাকিটুকু হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার।
মঙ্গলে আসলে কী আছে?
মঙ্গলে আসলে কী রয়েছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। অনেকের ধারণা সেখানে হয়তো প্রাণ ছিল বা এখনো রয়েছে। মঙ্গলে একসময় বিশাল সাগর ছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে পানির খোঁজও পেয়েছে। তাই এই গ্রহ সম্পর্কে আরো নিখুঁতভাবে জানার জন্য নাসা মানুষ পাঠাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
পৃথিবীতে প্রাণের শুরু কিভাবে?
যে পৃথিবীতে আমরা বাস করছি সেখানে প্রাণের শুরু কীভাবে তা সর্বকালের সব অজানা প্রশগুলোর মধ্যে একটি। আজও বিজ্ঞানীরা পরিষ্কার ধারণা দিতে পারিনি যে কীভাবে এখানে প্রাণের সূচনা হয়েছে। অনেকে মনে করেন গ্রহাণু বা ধূমকেতুর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণ পৌছেছে। আবার অনেক বিজ্ঞানীদের মতে মঙ্গলের কোনো এক অংশ একসময় পৃথিবীতে অবতরণ করে প্রাণের সূচনা ঘটায়। আর যদি তা-ই হয় তাহলে সেখানে প্রাণ কীভাবে এলো? আবার অনেকে তত্ত্ব দেয়, সাধারণ মলিকিউল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আরো জটিল মলিকিউল সৃষ্টি করেছে আর এসব মলিকিউল আরএনএ-এর মতো যৌগ গঠন করেছে। যা প্রাণ সৃষ্টির অন্যতম উপাদান।
Feature Image Source: shutterstock.com
Tags:
Science