মনে করুন, দিপু ও রানা জমজ ভাই। এরা একই শ্রেণীতেই পড়াশোনা করে। তবে জমজ হওয়া সত্ত্বেও এদের দুজনের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
দিপু সবসময় পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করে অন্যদিকে রানা পরীক্ষায় তেমন ভালো করতে পারে না।
দিপুর একটা প্রশ্ন মুখস্ত করতে লাগে ১০মিনিট অন্যদিকে রানার সেই একই প্রশ্নটা মুখস্ত করতে সময় লাগে ৩০মিনিট। তাহলে এর কারণ কি?
এখানে মূল পার্থক্য হচ্ছে দিপু যেভাবে পড়া মুখস্ত করে সেটা হচ্ছে Deep work অন্যদিকে রানা যেভাবে পড়া মুখস্ত করে সেটা হচ্ছে shallow work.
Deep work আর shallow work এর মধ্যে পার্থক্য কি?
shallow work হচ্ছে কোনো একটা নির্দিষ্ট কাজ আপনি করতে বসলেন। মনে করুন আপনি পড়তে বসেছেন।
এখন পড়ার সময় আপনি খেয়াল করলেন আপনার বন্ধু একটা মেসেজ দিয়েছে, এখন আপনি তার সাথে চ্যাটিং-ও করছেন আবার পড়াও পড়ছেন। এই একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে বসে আরও অনেক কাজ একই সাথে করাকে বলা হয় শ্যালো ওয়ার্ক।
পড়তে পড়তে চ্যাটিং করা, খাবার খাওয়া, জল বা বাথরুমে যেতে বারবার উঠা এসব করতে গিয়ে আমাদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়।
আর ডিপ ওয়ার্ক মানে হচ্ছে কোনো একটা নির্দিষ্ট কাজ করার সময় ওই সময়টুকুতে শুধুমাত্র ওই একটা কাজই করা এবং নিজেকে বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখা।
মনে করুন আপনি বর্তমানে 'কাজ A' করছেন এখন আপনি এটা কিছুক্ষণ করার পর সম্পূর্ণ না করে 'কাজ B' করতে চলে গেলেন।
তখন আপনি দেখবেন আপনি B কাজটি ভালোমতো করতে পারছেন না। কেননা আপনার মনোযোগ তখনো 'কাজ A' তে রয়েছে। B তে আপনি আপনার পুরো মনোযোগ না দিতে পারার কারণে কাজটি আপনার করতে অধিক সময় লাগবে।
ঠিক যা ঘটে পড়ার সময় ম্যাসেজের রিপ্লাই দেওয়ার সময়। রিপ্লাই দেওয়ার পর আপনি পড়ায় ভালো করে মনোযোগ দিতে পারবেন না কেননা তখনো আপনি ম্যাসেজে যা কথা হয়েছে সেগুলোর কথাই ভাবছেন।
তখন হয়তো যে প্রশ্ন মুখস্ত করতে আপনার ২০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয় সেটিই আপনার ১ ঘণ্টায়ও মুখস্ত হচ্ছে না। একে বলে Attention Residue
সাম্প্রতিক করা কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত ডিপ ওয়ার্ক চর্চা করে তাদের মস্তিষ্কে মাইলিন নামক একপ্রকার টিস্যু বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয় যার ফলে আমরা আমদের মনোযোগ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা পায়।
যতবেশি মাইলিন টিস্যু ততবেশি মনোযোগ আর যতবেশি মনোযোগ কাজ করার ক্ষমতাও ততই বেশি।
তাই ডিপ ওয়ার্ককে মাইলিন ওয়ার্কআউটও বলা হয়।
- কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপায় খুজে বের করুন
এতে আপনি চার ধরনের উপায় থেকে একটি বেছে নিতে পারেন।
1.Monastic Approach
এটি ফলো করতে হলো আপনাকে ঘর-পরিবার ছেড়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে গিয়ে সন্নাসীর মতো কাজের জন্য নিজের সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া।
2. Bi-modal approach
এখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য দূরে কোথাও গিয়ে কাজটি সম্পূর্ণ করে আবার নিজের ঘরে ফিরে আসবেন।
3. Rythmic approach
সারাদিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ডিপ ওয়ার্ক এবং অন্য নির্দিষ্ট সাময় শ্যালো ওয়ার্ক করে যাওয়াকে বলা হয় Rythmic approach.
4. Journalistic approach
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এটিকেই ফলো করে থাকে। যখনই আপনি দেখবেন আপনার হাতে পরবর্তী ২-৩ ঘন্টার জন্য কোনো কাজ নেই তখনি সেই সময়টাতে ডিপ ওয়ার্ক করতে শুরু করে দিন।
আমরা এই ৪ নং উপায় টা সম্পর্কেই আজকে জানবো।
- ১৫ মিনিট সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করুন
ডিপ ওয়ার্ক করার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিজের মন ও শরীর উভয়কে চাঙ্গা রাখা এবং এগুলো যাতে একে অপরকে সাড়া দিতে পারে এমন ব্যবস্থা করা।
এর জন্য সর্বপ্রথমে আপনাকে আলসেমি ভাব দূর করতে হবে। তাই আপনি ১৫মিনিট সময় নিয়ে ঘর বা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি শুরু করে দিন।
এতে আলসেমি ভাবও দূর হবে এবং আপনার কোনো প্রয়োজনীয় মেসেজ, মেইল অথবা কল থাকলে তার রিপ্লাই দিয়ে নিন।
১৫ মিনিট পর ফোনের এয়ারপ্লেন মোড অন করে নিন এবং সকল অ্যাপের নোটিফিকেশন অফ করে দিন। এতে করে পরবর্তীতে আপনার ফোকাস নষ্ট হতে পারবে না।
- মনোযোগ বাড়ানোর জন্য ১০ মিনিট মেডিটেশন
সমস্ত মেসেজ, মেইল বা গুরুত্বপূর্ণ কল করার পর সেগুলো আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে। আমরা সেগুলো নিয়েই ভাবতে থাকি। আর এটি আমাদের মনোযোগ বসানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা।
তাই নিজের মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নেই। ১০মিনিট মেডিটেশন করতে বসে যান, নিজের মনকে শান্ত করুন
- ডিপ ওয়ার্ক শুরু করুন
সব ধাপ সম্পূর্ণ করে ফেলার পর এবার সময় চূড়ান্তভাবে ডিপ ওয়ার্ক শুরু করার।
রুমের দরজা লাগিয়ে বসে পড়ুন। অবশ্যই আপনার ঘরটা শান্ত থাকতে হবে। আপনাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে।
এরপর নিজেকে জগত-সংসার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে মনোযোগ পুরাটাই কাজের উপর লাগিয়ে দিন। অবশ্যই প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যা আপনার কাজ করতে দরকার তা সঙ্গে নিয়ে বসবেন।
কাজ চালিয়ে যেতে থাকুন। :)
কাজ শেষ হলে ফোনের এয়ারপ্লেন মোড অফ করে যোগাযোগের ইচ্ছা থাকলে করুন। গানও শুনতে পারেন। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সকল কাজ শেষ করে পুনরায় পরবর্তী ডিপ ওয়ার্ বস করুন৷
এভাবে নিয়মিত মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন। ইনশাল্লাহ এভাবে চর্চা চালিয়ে যেতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
Tags:
Life Hacks
এরকম পোষ্ট আরো চাই
ReplyDelete