শরীরের অপ্রয়োজনীয় ভাবা অঙ্গগুলির কাজ কি?

ভ্রু, গ্লাবেলা, প্লিকা সেমিলুনারিস, আলজিভ, ট্রাগাস
ভ্রু, গ্লাবেলা, প্লিকা সেমিলুনারিস, আলজিভ ও ট্রাগাস

আমাদের শরীরের যত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে সেগুলোর ব্যবহার বা কাজ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। আমরা পা দিয়ে হাটতে পারি, হাত দিয়ে কাজ করতে পারি, চোখ দিয়ে এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পারি।

কিন্তু আমাদের শরীরে এমনও কিছু অঙ্গ রয়েছে যে, তা কেন রয়েছে সেগুলোই হয়তো আমরা অনেকে জানি না।

তবে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের শরীরের সবগুলো অঙ্গের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় ভাবা অঙ্গগুলির কাজ-

চোখের ভ্রুর কাজ কি?

আমরা জানি পাপড়ি আমাদের চোখকে বাইরের ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। এর কাজ তো আমরা সবাই জানি, তবে আমাদের ভ্রু কি কাজ করে সেটা কি জানি?

এমনিতে দেখলে মনে হয় এটি আমাদের বিশেষ কোনো কাজেরই না বা এটি না থাকলেও আমাদের তেমন কোনো অসুবিধা হতো না। 

হয়তো শুধুমাত্র দেখতে খারাপ লাগত, তবে এখানে সে ব্যাপার আসছে না।

তাহলে ভ্রুর কি বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই?
উত্তর হলো, হ্যাঁ আছে। এই ভ্রু আমাদের চোখে বৃষ্টির পানি  ঢোকা থেকে বিরত রাখে।

আমাদের ভ্রুর শেপ এই রকম হওয়ার কারণে যখন কপাল দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে তখন ভ্রুর কারণে চোখের ভেতরে না গিয়ে পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়। 

আর একই ঘটনা ঘটে যখন গরমে আমরা ঘেমে যায়। তখন পানির মতোই ঘাম ভ্রুর মধ্যদিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়। তাই আমাদের দৃষ্টি অটুট থাকে।

আর ঘাম লবণাক্ত পদার্থ হওয়ায় এটি যদি আমাদের চোখের মধ্যে পড়ে তাহলে আমাদের দেখতে অসুবিধা হবে।

আর সাম্প্রতিক একটা গবেষণায় দেখা যায় ভ্রু কথা বলার সময় যোগাযোগ এবং অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে।

Tragus

এই ট্রাগাস আমাদের বহিঃকর্নের একটি অংশ। সাধারনভাবে দেখলে মনে হতে পারে এই অঙ্গটি আমাদের কোনো কাজে লাগে না। তবে কানের এই অংশটিও আমাদের শ্রবণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই ট্রাগাস আওয়াজ কোথা থেকে আসছে আমাদের তা বুঝতে সাহায্য করে। যদি কোনো আওয়াজ আমাদের সামনে থেকে আসে তাহলে সর্বপ্রথম আমাদের কানের এই অংশে বাধাগ্রস্ত হয়। এটি তখন অনেকটা স্পীড ব্রেকারের মতো কাজ করে।

স্পীড ব্রেকারের মতো কাজ করায় আওয়াজ আমাদের মধ্যকর্ণে পৌছাতে দেরি হয়।

আবার আওয়াজ পেছনে থেকে আসলে সেটি সামনের আওয়াজের তুলনায় দ্রুত আমাদের কানে পৌছাবে।পেছন থেকে আসা আওয়াজ ট্রাগাসের মধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়ে পরে আমাদের কানে পৌছায়। কিন্তু সামনে থেকে আসা আওয়াজ সরাসরি কানে পৌছায়। 

তাই আমরা আওয়াজ পেছন থেকে নাকি সামনে থেকে আসছে তা বুঝতে পারি এই ট্রাগাসের কল্যাণে। যদি এটি না থাকতো তাহলে আমরা বুঝতেই পারতাম না আওয়াজ কোথা থেকে আসছে।

Glabella

আমাদের দুই চোখের মাঝখানে যেই জায়গা রয়েছে তাকে গ্লাবেলা বলে। এটি যে আমাদের কাজে লাগতে পারে এই প্রশ্ন আমাদের মনে হয়তো কোনোদিন আসেই নি। তবে এই জায়গাটি অনেক কাজের।

এই জায়গাটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আমাদের শরীর হাইড্রেটেড নাকি ডিহাইড্রেটেড। হাইড্রেটেড অর্থ হচ্ছে আমাদের শরীরে পানির অভাব আছে কিনা। পানি আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ন তা আলোচনা করা হয়েছে আমাদের আরেকটি পোস্টে।

আমরা যতই জীমে সময় ব্যয় করি, ভালো ভালো খাবার খায়, যদি শরীরে পানির অভাব থাকে তাহলে আম্মাদের শরীর ও মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করতে পারবে না।

তাই সব সময় আমাদের শরীরে পানির মাত্রা ঠিক থাকে কিনা তা জেনে রাখা জরুরী। আর আপনি এই কাজটা করতে পারবেন গ্লাবেলার মাধ্যমে।

তা জানার জন্য এই অংশে আলতো করে চাপ দিন। চাপ দেওয়ার পর যদি গ্লাবেলা আগের মতো ঠিক হয়ে যায় তবে আপনার শরীরে পানির মাত্রা ঠিক আছে। 

আর যদি চাপ দেওয়ার পর আগের মতো ঠিক না হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ততটুকু পানি নেই যতটুকু থাকার কথা। 

Plica semilunaris

আপনার চোখের কোনার এই অংশটি আপনি কখনো খেয়াল করেছেন? এই অংশের নাম হচ্ছে প্লিকা সেমিলুনারিস। বেশিরভাগ লোক এই অংশটি খেয়ালই করে না। খেয়াল করলেও হয়তো আপনার মনে হতে পারে এই অংশের কোন কাজ নেই।

তবে আমাদের চোখের গুরুত্বপূর্ন অংশগূলোর মধ্যে এটি একটি। এটিকে অনেক সময় চোখের তৃতীয় পাতাও বলা হয়। চোখের কোণায় অশ্রুনালীর পরে এটির অবস্থান। 

এটি আমাদের চোখের ঘূর্ণন ও অশ্রু ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি না থাকলে আমরা চোখ ঠিকমতো ঘোরাতে পারতাম না কেননা তখন আমাদের চোখের অক্ষিগোলক সরাসরি মিউকাস মেমব্রেনের সাথে যুক্ত থাকত।    

Uvula বা আলজিভের কাজ কি?

আমাদের মুখের ভেতরের আলজিভকে uvula বলা হয়। আমরা সবাই এটি চিনি। তবে এটির কাজ কি তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা।

আসলে এটি আমাদের কম সময়ে লালা উৎপন্ন করতে সাহায্য করে যার ফলে আমরা খাবার গিলতে পারি। কিছু কিছু তত্ত্বে বলা হয় যে এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের খাবার খেতে এবং কথা বলতে সাহায্য করেছিল।

এটি শুধু আমাদের মানবশরীরেই সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং খাবার খাওয়ার সময় নাসা গহ্বরে খাবার যেতে বাধা দান করে।
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

2 Comments

Previous Post Next Post