প্যারাসুট কি?কিভাবে প্যারাসুট বানানো হয়?

প্যারাসুট বানানো


বিমানের ককপিট থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল লােকটা। মহাশূন্য থেকে সাঁ সাঁ নেমে আসছে সে মাটির দিকে। বেশ খানিকটা নীচের দিকে চলে আসবার পর দেহের ভারে বিমানের সঙ্গে বাধা তার পিঠের দড়িটা গেল ছিড়ে।

সঙ্গে সঙ্গেই তার মাথার ওপর খুলে গেল যেন একটা মস্ত ছাতা। ওই ছাতায় বাতাস ভরে যাওয়ায় ধীরে ধীরে অনেকটাই নিরাপদে সে নেমে এল মাটিতে।

প্যারাসুট কি?

হ্যা, ওই ছাতাটারই নাম প্যারাসুট। বিপদ কালে, যুদ্ধের সময়ে বা অন্য কোন প্রয়ােজনে বিমান থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে নেমে আসবার একমেবাদ্বিতীয়ম আধার।

প্যারাসুট কথাটা এসেছে ইতালী ‘প্যার' এবং ‘সুট’- এই দুই শব্দের মিলনে। 'প্যার’ শব্দের অর্থ প্রতিরােধ এবং 'সুট’ শব্দের অর্থ পতন।

সুতরাং,পতনের হাত থেকে রক্ষা করে যে বস্তু, তারই নাম প্যারাসুট। যে হালকা অথচ দারুণ মজবুত নাইলনের কাপড় দিয়ে প্যারাসুট তৈরী হয়ে থাকে
তাকে বলা হয় ক্যানিপি ।

প্যারাসুট কে আবিষ্কার করেন? কিভাবে এটি আবিস্কৃত হয়?

প্যারাসুট আবিষ্কারের কাহিনী দীর্ঘ।শূন্যে উড়ে বেড়ার বাসনা থেকেই যেমন বিমানের আবিষ্কার। তেমনি শূন্যে বিচরণের স্বপ্ন থেকে প্যারাসুটের আগমন ।

যতদূর জানা গেছে, প্যারাসুটের প্রথম ব্যবহার হয় প্রাচীন চীনে। বিশেষ বিশেষ উৎসবে চীনের সম্রাটকে আনন্দ ও মজা পাইয়ে দেবার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লােকেরা অতিকায় ছাতা নিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে কাপ দিয়ে ঠিক ঠিক নিরাপদে মাটিতে নেমে আসত। প্যারাসুট ব্যবহারের
সেটাই প্রাচীনতম উদাহরণ ।

প্রখ্যাত শিল্পী বৈজ্ঞানিক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একে দেখালেন আগামী পৃথিবীর মানুষ কী ধরনের প্যারাসুট ব্যবহার করবে ।

লিওনার্দোর আঁকা ছবিকে অনুসরণ করে প্যারাসুট নির্মাণের প্রথম কৃতিত্ব সিবাস্টিন লে নরমান্ড নামক এক বিজ্ঞানীর। তিনি কিন্তু ছিলেন মূলত পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রের পন্ডিত লােক।

প্যারাসুট নিয়ে নানা কর্মকাণ্ড

সময় হলাে ১৭৮৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৬শে ডিসেম্বর । নরমান্ড আগেই ঘােষণা করেছিলেন, তিনি ২০০ ফুট উচু মন্টেপেলিয়েব অবজারভেটরি থেকে প্যারাসুটে ভর দিয়ে শূন্যে ঝাঁপ দেবেন।

সেই দৃশ্য দেখবার জন্য বহু দর্শক সমবেত হয়েছিল। সকলের চোখের সামনে সেই বিরাট উঁচু টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিলেন নরমান্ড । প্যারাসুট বাতাসে ফুটে উঠলাে। ধীরে ধীরে মাটির বুকে নেমে এলেন নরমান্ড।

বিস্মিত ও পুলকিত জনতা সহর্ষে অভিনন্দন জানাল নরমান্ডকে।

মেয়েদের মধ্যে প্রথমে যে প্যারাসুট-জাম্প দিয়েছিলেন, তাঁর নাম এলিজা গাণেরিণ । এলিজার দাদা অ্যানডু জে গাণেরিণ ও ছিলেন দুদে জাম্পার ।

ইংল্যানডে একবার তিনি ৪,০০০ ফুট উঁচুতে উড়ন্ত বেলুন থেকে প্যারাসুটের সাহায্যে ঝাঁপ দিয়ে সকলকে একেবারে থ করে দেন।

আর বিমান থেকে প্যারাসুটে ঝাপ দেবার প্রথম কৃতিত্ব যিনি দেখালেন,তিনি এক মার্কিনী বিমানকর্মী। নাম ক্যাপ্টেন বেবি। ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি ওই কৃতিত্ব দেখান।

চারদিকে সাড়া পড়ে গেল।তারপর ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেই শুরু হল, প্যারাসুটের কদর গেল বেড়ে
যে সমস্ত সৈনিকরা প্যারাসুটের সাহায্যে আকাশ থেকে মাটিতে আসতে সক্ষম, তাঁদের বাহিনীতে বিশেষ মর্যাদা ও বেতন দেওয়া শুরু হল।

জার্মানী প্রথম মহাযুদ্ধে তার দক্ষ প্যারাট্রুপারদের বিশেষভাবে কাজে লাগিয়েছিল । জার্মানীর দেখাদেখি ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, ফ্রান্সও নিজেদের প্যারাট্রুপার বাহিনী গড়ে তােলে।

ঝাঁপ দেবার পূর্ব মুহুর্তে ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। ঝাঁপ দিতে গিয়েও অনেকে পিছিয়ে আসতে চায়। তখন ‘ডেসপ্যাচার' নামক কর্মীরা তাদের জোর করে বিমান থেকে ঠেলে ফেলে দেয়।

এই রকম বার বার করবার ফলে সেই লােকটির সাহস বাড়ে, সে শূন্যে ঝাঁপ দিতে অনায়াসদক্ষ হয়ে ওঠে। তবুও এ কথা খুবই সত্যি যে, প্যারাসুটে ভর দিয়ে ঝাঁপ দেওয়াটা কম বেশী বিপদসঙ্কুল! অনেক সময় প্যারাসুটের দড়ি পেঁচিয়ে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

অনেক সময় বাতাসের বেগ তীব্র থাকায় জাম্পের ঠিক লক্ষ্যে না নামতে পেরে হয়তাে অনেক দূরে অন্য কোন জায়গায় নেমে পড়তে বাধ্য হলেন ।

সেটা সমুদ্র বা নদী বা গহন অরণ্যও হতে পারে। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা রােমাঞ্চকর। আর মানুষ তাে রােমাঞ্চপ্রিয়। তাই সেনাবাহিনী ছাড়াও প্যারাজাম্পারদের নিয়ে দেশে দেশে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

প্যারাট্রুপারদের জমকালাে ক্লাব; বেসরকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি এখন তেমন বিরল নয়। অ্যামেরিকার গনডেন নাইট ক্লাব বিখ্যাত। ব্রিটেনের ব্রিটিশ ন্যাশনাল স্কাইডাইভার অ্যাসােসিয়েশন এবং ক্যাটারপিলারের খ্যাতি সর্বদেশে।

প্যারাসুট বানানো (মডেল) বা এক্সপেরিমেন্ট (Experiment)  


প্যারাসুট কিভাবে কাজ করে এটা জানতে হলে একটা প্যারাসুটের মডেল বানাতে হবে। তাহলে বিষয় টা আমরা খুব সহজে এবং হাতে কলমে বুঝতে পারব।

যা যা উপকরণ লাগবে

১|  একটি পুতুল(ছোট)

২| একটি চৌদ্দ ইঞ্চি বাহু বিশিষ্ট বর্গাকার পলিথিনের কাগজ

৩| চৌদ্দ ইঞ্চি মাপের চারটি উলের সুতা 

যেভাবে এক্সপেরিমেন্টটি করতে হবে   

১)প্রথমে  পলিথিন কাগজের চার মাথায় চার টুকরো সুতা বেধে দিতে হবে। 

২) চার টুকরো সুতার শেষ মাথায় পুতুলটাকে বাধতে হবে

৩) এবার পুতুল টাকে উপর থেকে নিচে ফেলতে হবে। দেখা যাবে সেটি কি সুন্দর হেলতে দুলতে মাটিতে নেমে এলো।  

কেন এমন হলো?কিভাবে প্যারাসুট কাজ করে?

কোনোকিছু উপর থেকে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসার কারণ হলো অভিকর্ষজ বল। এই বল সকল বস্তুকে ভূপৃষ্ঠের দিকে আকর্ষণ করে বলে সবকিছুই উপর থেকে নিচে নেমে আসে।  এখন আমাদের চারপাশে রয়েছে বাতাস।

বাতাসের নানানমুখী বলের একটি হলো উর্ধ্বমুখী বল। যখন পুতুলটা পলিথিনের কাগজ সহ নিচে পরতে থাকে তখন পলিথিনের কাগজটি অনেকটা জায়গা জুড়ে সুষমভাবে বাতাসের এই ঊর্ধ্বমুখী বল পায়।

এই বল পলিথিনের কাগজটিকে উপরের দিকে ঠেলে দেয় আবার অভিকর্ষজ বল নিচের দিকে আকর্ষণ করে। অভিকর্ষজ বলের পরিমান বেশি হওয়ায় পুতুলটা নিচে নেমে আসে কিন্তু বাতাসের ঊর্ধমুখী বলের কারণে সেই পতন অনেকটাই ধীরে হয়।

ফলে কোনো ক্ষয় ক্ষতি হয় না বললেই চলে এবং পুতুলটিও অনেক সুন্দর ভাবে নিচে নেমে আসে। 

আসলে প্যারাসুটে একধরনের বায়ুরোধী কাপড় ব্যাবহার করা হয় বলে এটিও ধীরে ধীরে নামে। তবে এটি মনে করবেন না যে,যে কেউ চাইলেই সহজেই প্যারাসুট নিয়ে নিরাপদে নামতে পারবে।

প্যারাসুট নিয়ে নিরাপদে নামতে হলে চাই সঠিক প্রশিক্ষণ যা ওই সৈনিকদের থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষও ঝাপ দিতে পারবে তবে তাকে একজন প্রশিক্ষিত প্যারাট্রুপারের সাথে ঝাপ দিতে হবে। 

কোন অঞ্চল থেকে ঝাপ দেওয়া হচ্ছে, কত জন ঝাপ দিচ্ছে, সে অঞ্চলের বাতাসের গতি কেমন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্যারাসুটের ডিজাইন বিভিন্ন রকম হতে পারে।

তবে সেগুলোর কাজ একই আর তা হচ্ছে পতনের গতিকে ধীর করা।

Feature Image Source : shutterstock.com
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

Post a Comment

Previous Post Next Post