পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ৫টি সাপ!

পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ

সাপ.......!!!! শব্দটিকে শুনে আমরা প্রায় সবাই চমকে উঠি। কেননা আমরা সাপকে বিষাক্ত প্রাণী হিসেবে জানি।

আমরা সবাই ভাবি, সাপের এক কামড়ে হয়তো আমার জীবনটাই চলে যাবে। কিন্তু আমাদের এ ধারণাটি সব সাপেদের বেলায় প্রযোজ্য নয়।

আমাদের এ পৃথিবীতে ৩০০০ প্রজাতিরও বেশি সাপ রয়েছে। এসব সাপেদের মধ্যে কিছু সাপ রয়েছে বিষাক্ত;যাদের এক কামড়ে আপনার জীবনটাও চলে যেতে পারে।

আবার কিছু সাপ রয়েছে নিরীহ যেগুলো মানুষের আশে-পাশেও থাকতে চায় না। মূলত,সাপেরা ইচ্ছে করে কাউকে কামড়ায় না;যখন তারা ঘাবড়ে যায়, তখন কামড়ায়। 

তবে যদি কামড়টা সাধারণ সাপ দেয়,তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কিন্ত যদি কামড়টা বিষাক্ত সাপ দেয়,তবে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফেরা মুশকিল। আজ সেরকমই কিছু বিষাক্ত সাপ নিয়ে আমাদের আলোচনাঃ


1. Belcher sea snake | বেলচারস সী স্নেক


'Belcher sea snake' হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ, যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Hydrophis Belcheri'। 

সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় ২য় স্থানে থাকা সাপ অর্থাৎ ইনল্যান্ড তাইপানের থেকেও এর বিষ ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। 

হাইড্রোফিস বেলচেরি সাপ সাধারণত  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রে পাওয়া যায়। এ সাপের কয়েক ফোটা বিষ কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০০০ জন মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট। 

কিন্তু এ সাপ যেহেতু সমুদ্রে থাকে, তাই এ সাপটি মানুষের জন্য বেশি বিপদজনক নয়। এটি একটানা ৭-৮ ঘণ্টা সমদ্রের নিচে থাকতে পারে। এরা জীবনের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রেই কাটায়। 

কেবলমাত্র জেলেদের যারা সমুদ্রে যায় তাদের মাঝে মাঝে এ সাপের সম্মুখীন হতে হয়। হাইড্রোফিস বেলচেরি সাপ কামড় দিলেও বেশিরভাগ সময় বিষ প্রয়োগ করে না। 

যদিও এ সাপ লাজুক প্রকৃতির হয় এবং মানুষ থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে। এ সাপটি ০.৫ থেকে ১ মিটার লম্বা হয়ে থাকে এবং ৪-৫ বছর পর্যন্ত বেচে থাকে।

2. Inland Taipan | ইনল্যান্ড টাইপ্যান


মাটিতে থাকা সাপদের মধ্যে এ সাপটি সবচেয়ে বেশি বিষাক্তকর, যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Oxyuranus microlepidotus'।

এর এক কামড়ে ১০০ মিলিগ্রামের মতো বিষ থাকে; যা এক সাথে ১০০ জন মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট। এই সাপ cobra(কোবরা) সাপের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি বিষধর হয়ে থাকে।

এই সাপের গড় দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার এবং সর্বোচ্চ ২.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

এ সাপের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এরা ঋতুর সাথে রং বদলাতে পারে। গ্রীষ্মকালে অনেকটা জলপাই রঙের ও শীতে ধূসর। এদের অনেকসময় ক্ষুদ্র আঁশের সাপ বলা হয়। 

প্রজাতিটি মধ্য পূর্ব  অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে বসবাস করে। 'Inland taipan' হলো লাজুক প্রকৃতির এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য একটি সাপ। 

ইনল্যান্ড তাইপান সাপ ঝামেলা থেকে বাচতে পছন্দ করে। তবে সাপটি রেগে গেলে প্রতিপক্ষের জন্য বেশ মারাত্মক। এই সাপটি কামড়ানোর ৪৫-৬০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা নিতে না পারলে মৃত্যু অনিবার্য। 

তবে মজার ব্যাপার এই যে,আজ পর্যন্ত এই সাপের কামড়ে কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা যায়নি।

3.Eastern brown snake

অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া গিয়ে থাকা একটি বিষাক্ত সাপ এটি, যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Pseudonaja textilis'।
এটি ইনল্যান্ড টাইপ্যানের পর সবচেয়ে বিষধর সাপ। 

এটি লম্বায় ২ মিটারের বেশি হয়ে থাকে এবং অনেক দ্রুতগতির৷ অস্ট্রেলিয়ায় সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায় তার ৬০ শতাংশ মানুষ মারব যায় এই সাপের কামড়ে। 
   
এটি মানব বসতির কাছাকাছি থাকতে বেশি পছন্দ করে। এই সাপের একটি ছোটো বাচ্চাও মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। 

এরা খুব আক্রমনাত্মক হয়। এদের কামড় খাওয়ার পর চোখে অন্ধকার ছেয়ে যায়। এদের কামড়ানোর ৫ মিনিটের মধ্যে মানুষ মারা যায়। ।

4.Rattle snake | র‍্যাটল সাপ

এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ,যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Crotalus cerastes'। এ সাপ এর দেহের শেষাংশের জন্য বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।

Rattle অর্থ ঝুমঝুমি। এই সাপ যখন লেজ নাড়ায় তখন ঘুঙের মতো আওয়াজ সৃষ্টি হয় এবং সেই কারণে এই সাপের নাম 'rattle snake' হয়েছে।

র‍্যাটল সাপের কিছু প্রজাতি ডিম পাড়ে বাকিগুলো সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে এবং বাচ্চাগুলো জন্ম থেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়।      

এ সাপ খুব রাগি প্রকৃতির হয়। র‍্যাটল সাপ চোখের পলকে আক্রমণ করতে পারে। এদের বাচ্চা বড় সাপের তুলনায় বেশি বিপদজনক।

কারণ,বাচ্চা সাপেদের শরীরে বড়দের চেয়ে বেশি বিষ থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক র‍্যাটল সাপ দংশনের সময় বিষ প্রয়োগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু বাচ্চা র‍্যাটল সাপ তা পারে না।  

এদের শরীরে হিমোটক্সিস বিষ পাওয়া গিয়ে থাকে। এ বিষের প্রভাবে মানব দেহের পেশিতন্ত্র ক্রমাগত নষ্ট হতে থাকে, বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে যায় এবং রক্ত জমাট বাধতে ব্যাহত হয়। 

এ সাপের কামড়ের ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিডোজ দেওয়া হলে বাঁচার সুযোগ থাকে,নতুবা মৃত্যু অনিবার্য।

5.Death adder | ডেথ এডার


এ সাপ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউগিনিয়াতে পাওয়া গিয়ে থাকে,যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Acanthophis antarcticus'।

এ সাপের প্রধান বৈশিষ্ট হলো এ সাপ অন্য সাপকেও নিজের শিকার বানিয়ে নেয়। এর বিষে নিউরোটক্সিন থাকে। সাপের বিষের দিক থেকে এটি নবম স্থানে রয়েছে।  

এ সাপটি প্রায় ৪০-১০০ মিলিগ্রাম বিষ শিকারের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এই সাপের বিষক্রিয়ায় শ্বাস কষ্ট ও প্যারালাইসি দেখা দেয়। 

মানুষের দেহে এ সাপের বিষের ক্রিয়া করতে ৬ ঘণ্টা সময় নেয়। এই সাপ একবার বিষ প্রয়োগ করার পর খুব দ্রুত আবার বিষ পুনরুৎপাদন করতে পারে।
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

1 Comments

Previous Post Next Post