পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ৬টি মাছ!

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর মাছ কোনটি? সার্ক, কুমির, সাপ এবং পানিতে বসবাস করা অ্যানাকন্ডা বা অজগরের মতো ভয়ংকর প্রাণী সম্পর্কে তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু নদী,খাল, বিল ও সমুদ্রে এমন কিছু ভয়ংকর মাছ রয়েছে যাদের সামনে এই ভয়ংকর সামুদ্রিক জীবগুলো কিছুই নয়।

প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মানুষ এই ভয়ংকর মাছগুলোর আক্রমণে মৃত্যুবরণ করে। আমরা একুরিয়ামে যেসব সুন্দর সুন্দর মাছ দেখি এবং যেসব মাছ খেয়ে থাকি তাছাড়া আমাদের পৃথিবীতে অনেক ভয়ংকর মাছ রয়েছে, যেগুলো এক পলকেই তার চেয়ে বড় বড় মাছকে ঘায়েল করে দিতে পারে।

কিছু কিছু মাছ এতটাই বড় যে তারা একটি হাতি গিলে ফেলতে পারবে। আবার কিছু মাছ রয়েছে যারা এতটাই ছোটো যে সেগুলো আমাদের নাক কিংবা কানের মধ্যে দিয়ে সহজেই ঢুকতে পারে।

ভয়ংকর মাছগুলো মানুষের থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে। তবে তারা মানুষের উপরও আক্রমণ করে। এমনকি মানুষের কাপড়-চোপড়ও হজম করে ফেলে। আজ আমরা নদী ও সমুদ্রে পাওয়া কিছু ভয়ংকর মাছ সম্পর্কে জানব। যারা তাদের সামনে যেকোনো কিছু খেয়ে ফেলতে পারে।

Piranha

পিরানহা মাছের নাম তো প্রায় সবাই শুনে থাকবেন। সকল মাছের প্রজাতির মধ্যে পিরানহা মাছকে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর ও বিপজ্জনক মানা হয়। এরা অনেক আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়ে থাকে।

এদের দাঁত অনেক ধারালো ও চোয়াল অনেক শক্ত হয়ে থাকে। এই মাছ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মানুষের হাড্ডিও খেয়ে ফেলতে পারে। 

আকারে ছোটো কিন্তু ভয়ংকর এই মাছটির ৪০-৫০টি প্রজাতি রয়েছে। যাদের মধ্যে লাল পেটওয়ালা মাছকে সবচেয়ে ডেণ্জারাস বলা হয়।

এরা সর্বদা ভোজন ও শিকারে তৎপর থাকে। এরা দলবদ্ধ হয়ে ঘোরাফেরা করে। পিরানহা মাছের একটি দলের তুলনা একটি কাটিং মেশিনের সাথে করা যায়। 


এদের দলের মধ্যে পড়লে শিকারী যতই বড় হোক না কেন কেউ তাকে রক্ষা করতে পারে না, শিকারীকে তাদের আহার হতেই হয়।

Stone Fish

'Stone fish' পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণীর মধ্যে একটি। এই মাছ এশিয়ার ইন্দো প্যাসিফিক নদীতে অনেক পাওয়া যায়। পানির মধ্যে এই মাছকে খুজে বের করা অনেক কঠিন কাজ। 

কারণ এদেরকে দেখতে একেবারে সমুদ্রের পাড়ে থাকা পাথরের মতো। তাই এই মাছটির নাম হয়েছে Stone fish। 

এদের পাথরের মতো রং ও আকার এদেরকে ভয়ংকর করেছে। এদের পিঠে অনেক বিষাক্ত সুই রয়েছে। এদেরকে ছুতে গেলে কিংবা এদের কাছে গেলে এরা পিঠে থাকা সুই শরীরে ঢুকিয়ে দেয়। 

আর এ সুই দিয়ে সে শরীরের ভেতর তীব্র মাত্রায় বিষ ছাড়ে। যা কয়েক মিনিটের মধ্যে শিকারের সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরে। পানির বাইরেও আনুমানিক ২৪ ঘন্টা জীবিত থাকতে পারে ওই মাছ।

এই বিষ এতোটাই বিষাক্ত যে যদি কারো শরীরে প্রবেশ করে তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা করা না হলে হাত ও পা কেটে ফেলতে হতে পারে। 

এদের বিষের কয়েক ফোঁটা যদি কোনো শহরের পানিতে মিশিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেই পানি পান করা সব মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই মাছ ০.১৫ সেকেন্ডে শিকার করতে পারে।
'Electric eel ' বাস্তবে কোনো ইল নয়। এরা এক প্রকার ক্যাটফিশ। দক্ষিণ আমেরিকার নদীতে বসবাস করা এই ইলকে পানির সবচেয়ে ভয়ংকর মাছ বা জীব বলা হয়।

কারণ এই মাছকে ছোঁয়া মাত্রই আপনার শরীরে কারেন্টের শক লাগবে। ২ মিটার লম্বা এই মাছ ৬০০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শট দিতে পারে। যা যেকোনো জীবজন্তু ও মানুষকে মেরে ফেলতে পারে।

এদের শরীরে সর্বদা কারেন্ট ফ্লো হতে থাকে। এদের এক স্পর্শই যে কারো নার্ভাস সিস্টেম বন্ধ করে দিতে পারে। অনেক সময় এদের কারণে অনেককে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

এই মাছ সম্পর্কে আরও পড়ুনঃ বিস্ময়কর জীব: বৈদ্যুতিক ইল

Payara

পায়ারা সবচেয়ে ভয়ংকর মাছগুলোর মধ্যে একটি। এদেরকে ভ্যাম্পায়ার মাছও বলা হয়। বলা হয়ে থাকে এরা পিরানহার থেকেও বেশি হিংস্র। 

এদের এতোটা হিংস্র হওয়ার পিছনে কারণ হলো এদের অনেক মজবুত চোয়াল এবং অনেক শক্ত ধারালো দাঁত। এদের নিচের চোয়ালে বড় বড় ধারালো দুটি দাঁত রয়েছে। যা মুখ বন্ধ করলে দাঁতগুলো উপরের চোয়ালে থাকা ২টি ছিদ্রে ঢুকে যায়।

এই দাঁতের মধ্যে যদি কোনো শিকার আটকে যায়,তাহলে তার বাচাঁ অসম্ভব। কারণ এরা এদের চোয়ালে শিকারকে একবারে আটকাতে পারে। এদের সম্পূর্ণ বিকশিত মাছ ৪ ফুটের বড় হতে পারে। জানলে অবাক হবেন পায়ারা একমাত্র মাছ যারা পিরানহার মতো ভয়ংকর মাছকে খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে।

Moray eel

এরা পৃথিবীর সব মাছের প্রজাতি থেকে আলাদা ও সবচেয়ে বেশি জীবননাশক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আর এর কারণ এদের শক্ত চোয়াল।

সাধারণত যেকোনো মাছ বা মানুষের একজোড়া চোয়াল থাকে। কিন্তু এদের শরীরে দুইটি চোয়ালের আলাদা আলাদা জোড়া রয়েছে।

বাইরের দিকের চোয়ালে ধারালো দাঁত রয়েছে। আরেকটা চোয়াল মুখের ভেতরে গলার কাছে রয়েছে। যখন এরা শিকার করে তখন শিকারকে বাইরের চোয়াল দিয়ে সম্পূর্ণভাবে শক্ত করে আটকে ধরে। তারপর আরেকটা চোয়াল শিকারকে মুখের ভেতরে টেনে নিতে এবং শিকারকে মেরে ফেলার কাজ করে।

এরা অনেক বড় আকৃতির হয়ে থাকে। মানুষের শরীরের কোনো অংশ যদি এর দাঁতের মাঝখানে পড়ে তাহলে ধরে নিন সেটি আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

এই মাছের প্রজাতি খুবই দুর্লভ ও খুবই অদ্ভুত। এরা লম্বায় ৭ ফিট থেকে ২০ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের লম্বা নাকে অনেক ধারালো দাঁত থাকে। আর তাই এদের নাক কাঠ কাটা করাতের মতো দেখা যায়।

এরা এদের করাতের মতো নাক অনেক আক্রমণাত্মক ভাবে ব্যবহার করে।এদের নাক এতটা শক্ত হয় যে সে এটা দিয়ে যে কোনো জিনিসকে একেবারেই কেটে ফেলতে পারে।

Puffer fish

Puffer fish এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে 'Tetraodontidae'। এ মাছের বিশেষত্ব হচ্ছে এরা প্রয়োজন পড়লে তাদের শরীরকে ফুলিয়ে একটি বলের আকৃতি ধারণ করতে পারে।

এটা এই মাছের একটা ভিন্ন মেকানিজম এর মাধ্যমেই এরা এদের শিকার থেকে রক্ষা পায়। যে জিনিস এই ভয়ংকর মাছকে বিপজ্জনক করে তোলে তা হলো তাদের ধারালো দাঁত ও তাদের বিষ।

এ মাছের অনেক প্রজাতি রয়েছে। যাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পিরানহা মাছের মতো আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। আবার কিছু প্রজাতি রয়েছে যাদের মধ্যে জীবন কেড়ে নেওয়ার মতো বিষাক্ত বিষ রয়েছে। 

এই মাছের এক ফোঁটা বিষ আপনার শরীরে প্রবেশ করলেই আপনার মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। বিষাক্ত হওয়ার সাথে সাথে এদের দাঁত অনেক শক্ত ও ধারালো হয়ে থাকে।

এই মাছ যদি কারো উপর আক্রমণ করে তাহলে এদের একটা কামড়েই শিকারের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ এদের দাঁতের মাঝখানে যদি আপনার আঙ্গুল চলে আসে তাহলে এদের এক কামড়েই আপনার আঙ্গুল শরীর থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে।

এদের ধারালো দাঁত দিয়ে এরা লোহার তৈরি জিনিসপত্র খুব সহজেই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে।সাথে সাথে এদের পাকস্থলীতে যে কোনো জিনিসকে খুব সহজেই হজম করে ফেলতে পারে।
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

3 Comments

Previous Post Next Post