ঔষধি গাছের নাম, গুণাগুণ ও উপকারিতা

ঔষধি গাছের ছবি সহ গুণাগুন

বিভিন্ন ঔষধি গাছের নাম ও গুণাগুণ সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই জানা আছে। আবার অনেকে হাতেগোনা দুই-একটি ঔষধি গাছ চিনেন। এসব ঔষধি গাছের নানা গুণাগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। ঔষধি গাছ মূলত আমাদের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। তাই তেমনি কিছু চেনা পরিচিত ঔষধি গাছ নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব।

ঔষধি গাছ তুলসীর উপকারিতা ও গুণাগুণ

তুলসী একটি সুগন্ধিযুক্ত ঔষধি উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্রই এ উদ্ভিদটি দেখা যায়। বাংলাদেশে ৪ ধরনের তুলসী উদ্ভিদ দেখা যায়। 

এগুলাে হলাে- বাবুই তুলসী, রাম তুলসী,কৃষ্ণ-তুলসী ও শ্বেত-তুলসী। তুলসী শব্দের অর্থ “যার তুলনা নেই"। ঘন শাখা -প্রশাখাবিশিষ্ট এ উদ্ভিদটি ২ থেকে ৩ ফুট লম্বা হয়।এর কাণ্ড কাষ্ঠল এবং পাতা ২ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা।এর পাতা, ফুল ও ফলে ঝাঁঝাল গন্ধ আছে। তুলসী উদ্ভিদের নানা ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। যথা-
  •  জ্বর,মাথাব্যথা,গলার ক্ষত,সর্দি,কাশি ও ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি নানা রোগের উপশমে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়।
  • এ উদ্ভিদের রস কৃমি ও বায়ুনাশক।
  • তুলসী রক্ত পরিষ্কার ও চুলকে স্বাস্থ্যকর রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • চুলকানিসহ ত্বকের নানা রোগের উপশমে তুলসী অত্যন্ত কার্যকারী।
  • বলা হয়ে থাকে,মানুষের দেহে সব ধরনের ইনফেকশনকে প্রতিহত করে তুলসী।
  • রাতকানা রোগ নিরাময়ে ঐতিহ্যগতভাবে তুলসীর ব্যবহার রয়েছে।
  • রক্তে চর্বির মাত্রা কমাতে তুলসী কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • তুলসী ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • তুলসী পাতা সিদ্ধ করে তার সাথে ২ গ্রাম গোল মরিচ মিশিয়ে পানীয় তৈরি করে খেলে ডেঙ্গু রোগের উপশমে খুব ভালো কাজ করে।
  • দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির জন্য তুলসী খুবই উপকারী।
  • ঔষধ হিসেবে এ উদ্ভিদের ব্যবহার্য অংশ হলো এর রস,পাতা ও বীজ।ভারতে আয়ুর্বেদ ঔষধ তৈরিতে তুলসীর ব্যপক ব্যবহার রয়েছে। তুলসী মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উদ্ভিদ।

গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধি উদ্ভিদ বাসক

বাসক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটি ভারতের সমতল ভূমি এবং হিমালয় পর্বতের ৩৩০০ ফুট উঁচুতেও জন্মায়।

বাসক একটি ছোট আকারের চিরসবুজ উদ্ভিদ।বাসক উদ্ভিদের পাতা, মূল, ফুল এবং কান্ডের বাকল-সবই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাসকের পাতাগুলো সবুজ। কিন্তু যখন শুকিয়ে যায় তখন সবুজাভ-বাদামি রং ধারণ করে এবং স্বাদ তেতো হয়।এই পাতার গন্ধটি অনেকটা চা পাতার গন্ধের মতো।বাসক উদ্ভিদের ঔষধি ব্যবহারফুল হলোঃ
  • এর পাতা কাশ এবং ঠান্ডায় মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।বহু বছর ধরে হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় বাসক উদ্ভিদের পাতা,মূল এবং ফুল ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • বাসক পাতার রস ডায়রিয়া এবং আমাশয় রোগ নিরাময়ে বিষেশ কার্যকর।
  • বাসক দেহের ভিতর এবং বাইরের রক্তক্ষরণে ব্যবহৃত হয়।
  • পাতার গুঁড়ো ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
  • বাসক রক্তের গোলযোগ,হৃৎপিণ্ডের সমস্যা,জ্বর,বমি,স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা,জন্ডিস,মুখের সমস্যা এবং গনরিয়া রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ঘৃতকুমারীর রয়েছে নানা ঔষধিগুণ 

ঘৃতকুমারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। পৃথিবীতে ২৪০ প্রজাতির ঘৃতকুমারী রয়েছে,যা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং আমেরিকায় দেখা যায়।অধিকাংশ ঘৃতকুমারী উদ্ভিদের কান্ড নেই।

উদ্ভিদটি ২৪-৩৯ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।পাতায় জেলির মট পদার্থে ৭৫ ধরনের খনিজ পদার্থ আছে। ঘৃতকুমারীর যথেষ্ট ঔষধি গুণ রয়েছে। ঔষধ হিসেবে ঘৃতকুমারীর পাতা ও শাঁস ব্যবহার করা হয়। ঘৃতকুমারীর ঔষধি গুণগুলো হলোঃ
  • নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পানে পরিপাক পক্রিয়া সহজ হয়।ফলে দেহের পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • ডায়রিয়া সারাতে এর রস দারুণ কাজ করে।শরীরের শক্তির যোগানসহ ওজন ঠিক রাখে।
  • ঘৃতকুমারী দেহে শ্বেত রক্তকণিকা গঠন করে,যা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে।
  • ঘৃতকুমারীর রস দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে  একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঔষধের কাজ করে। 
  • ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
  • হাড় ও মাংসপেশির ঘোড়াগুলোকে শক্তিশালী করে।
  • এর পাতার রস ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও উপকারী 
  • অ্যাজমা ও ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ঘৃতকুমারী লোকজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
  • ঘৃতকুমারী শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের মিশ্রণ ও খনিজ পদার্থ তৈরি করে।

পাথরকুচি

পাথরকুচি বিরুৎ জাতীয় একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা হয়।৬-১০ ইঞ্চির পর থেকে পাতা গজাতে শুরু করে।পাথরকুচি উদ্ভিদের পাতা অনেকটা ডিম্বাকার।

পাতা মংসল ও মসৃণ।পাতার চারপাশে ছোটো ছোটো গোল খাঁজ রয়েছে।এই খাঁজ থেকে নতুন পাতার জন্ম হয়।কখনো কখনো, বিশেষ করে গাছ বয়স্ক হয়ে গেলে গাছেই ঐ খাঁজ থেকে চারা গজায়।বাংলাদেশ ও ভারতে এ উদ্ভিদটি প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।পাথরকুচির ঔষধি গুণগুলো হলোঃ
  • পাথরকুচি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • পুরোনো সর্দিতে পাথরকুচি পাতার রস গরম করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • ছোট,বড় সবার মূত্র রোধে এর পাতার রস কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • মূত্রনালির যেকোনো সংক্রমণে, রক্তপিত্তে, পেট ফাঁপায়, শিশুদের পেট ব্যথায় এবং মৃগী রোগীদের পাথরকুচির রস খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
  • এছাড়া ব্রণ,ক্ষত ও মাংসপেশি থেতলে গেলে, বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে পাথরকুচি পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

পুঁইশাক 

সারা দেশে শাক হিসেবে পুঁইশাক একটি নিয়মিত খাবার। সাধারণত সারা বছরই পাওয়া যায়। লম্বায় ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাতাগুলো হার্ট শেপ, নমনীয় , চকচকে এবং মসৃণ। এর পাতা, লতানো ডাল এমনকি ফলও অনেকে খেয়ে থাকে। এর ঔষধি গুণগুলো হলোঃ 
  • পুঁইশাক মূত্রবর্ধক এবং ত্বক মসৃণকারক
  • কব্জির ব্যথা উপশমে এর রস দারুণ কার্যকরী
  • এটি নাক এবং কানের সমস্যা দূরীকরণেও ব্যবহৃত হয়
  • এছাড়াও ফুসকুড়ি, গনোরিয়া, আলসার সমস্যা সহ আরো নানান কাজে এটি ব্যবহৃত হয়

পুদিনা

পুদিনা একটি সুগন্ধি লতা-পাতা জাতীয় ঝোপালো উদ্ভিদ।এর আদি নিবাস এশিয়া,ইউরোপ এবং আফ্রিকা। পুদিনার ১৩-১৮ টি প্রজাতি রয়েছে।এ উদ্ভিদটি ৪ থেকে ৪৭ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।পুদিনা ভিটামিন এ,সি এবং বি২ এর উত্তম উৎস।পুদিনা ঐতিহ্যবাহী ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।পুদিনার ঔষধি গুণগুলো হলোঃ
  • পাকস্থলী এবং বুকের ব্যথায় এটি ব্যবহৃত হয়।
  • ত্বক পুড়ে গেলে পুদিনা পাতার পেস্ট লাগালে পুড়ে যাওয়া স্থান দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • পুদিনা বিভিন্ন কারখানায় কুকিস,চকলেট,ক্যান্ডি এবং চুইংগাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • পুদিনা পাতা বিভিন্ন ক্রীম,লোশন,সুগন্ধি,শ্যাম্পু এবং টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
Fuad Hassan Fahim

I am Fahim. Collecting knowledge in various field is my hobby. I always wanted to share knowledge to other peoples. So i created https://www.anyhelp71.xyz (blog) and since 2019 i am sharing various knowledge via this.

2 Comments

  1. Wow bro thanks for your giving me such a importabt information which I didnt know before.Thanks a lot once again...

    ReplyDelete
  2. All of your post are informative.Keep on,we want this type of post again

    ReplyDelete
Previous Post Next Post