পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী কোনটি? অথবা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী কোনটি? এই প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই।
মানুষের জীবজন্তু সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। কিন্ত সব জীবজন্তু সম্পর্কে আমরা জানতে পারি না।
এমনকি বর্তমানে আমাদের এ পৃথিবীতে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যাদের জন্য আমরা মানুষরাই দায়ী।
আজ এমন ১০টি প্রাণী নিয়ে আলোচনা করা হবে যাদের পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর বা বিষাক্ত জীবজন্তু বললে ভুল হবে না। তবে এদের ক্রমানুসারে সাজানো সম্ভব নয়।
1.Dyeing dart frog: পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ব্যাঙ
এটি বিষাক্ত ব্যাঙের প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ভার্টিব্রাটা। যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Dendrobates tinctorius'। এই ব্যাঙটি ব্রাজিল, পানামা, কোস্টারিকা, কলম্বিয়াসহ আরো অনেক দেশে পাওয়া যায়।
এই ব্যাঙটি এর মুখ থেকে একশোরও বেশি বিষাক্ত পদার্থ বের করতে পারে। এই ব্যাঙ আকারে অনেক ছোটো হয়ে থাকে, তবে এরা অনেক ভয়ংকর।
এদের ওজন ২ গ্রামের বেশি হয় না আর আকার সাধারণত ২০-৪০ মিলিমিটারের কম হয়। তবে মাঝেমধ্যে এরা ৫০-৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে যায়।
এরা খুব হালকা হওয়ায় সহজেই পাতা ও ডালে চলতে পারে। এদের রং দেখে এদের নিরীহ মনে হলেও এরা cobra প্রজাতির থেকেও বেশি বিষাক্ত হয়ে থাকে।
এরা যে বিষ তাদের মুখ থেকে বের করে তাকে batrachotoxin বলে। এদের বিষ যেকোনো সুস্থ মানুষকে ২০ মিনিটের মধ্যে মেরে ফেলতে পারে।
এদের বিষ যদি আপনার শরীরে পড়ে তাহলে সাথে সাথেই আপনার মাথা ব্যথা ও শরীর ব্যথা শুরু হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ
2.Puffer Fish: পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ
পাফার ফিশ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ। এটি ভার্টিব্রাটাদের মধ্যে ২য় সর্বোচ্চ বিষাক্ত৷ এর বিষ খুবই মারাত্মক কেননা এটি টেট্রোডোটক্সিন ধারণ করে।
এই টেট্রোডোটক্সিন ভয়ংকর রাসায়ানিক যৌগ সায়ানাইডের চেয়েও ১২০০গুণ বেশি বিষাক্ত। বুঝতে আর অসুবিধা থাকার কথা নয় যে এই মাছটি কতটা ভয়ংকর।
এই মাছটি সাধারণত ১৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয় এবং শরীরে প্রচুর পরিমাণ পানি ধারণ করে নিজেকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে নিতে পারে।
তখন এর দেহে থাকা কাঁটার মতো দেখতে অংশগুলো অনেক শক্ত হয়ে যায় এবং ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। মূলত আত্মরক্ষার জন্য তারা এই রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে।
পাফার ফিশের ১৩০টির মতো প্রজাতি রয়েছে এবং বাংলাদেশেও এই মাছের ১৩টি প্রজাতি রয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশে এই মাছ ফুটকা মাছ নামে পরিচিত।
ফ্লোরিডা, বাহামা, ব্রাজিলের দক্ষিনাংশ সহ পৃথিবীর প্রায় সব সাগরেই এদের পাওয়া যায়। একটি পাফার ফিশ ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট।
ফুটকা মাছ বা পাফার ফিশ কি খাওয়া যায়?
এতটা বিষাক্ত জানা সত্ত্বেও জাপানে এই মাছ সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ হিসেবে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এই ডিশ ফুগু নামে পরিচিত।
শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সধারী শেফরাই এই মাছ রান্না করার অনুমতি পেয়ে থাকে। শুধু জাপানে নয় চীন ও কোরিয়ার মানুষরাও এটি খেয়ে থাকে। কিন্তু রান্নায় ভুল হলে মৃত্যু স্বাভাবিক কেননা এর কোনো চিকিৎসা নেই।
3.Inland taipan: স্থলে পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ
Taipan-কে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম 'Oxyuranus microlepidotus'।এই সাপ অস্ট্রেলিয়া ও গিনিতে পাওয়া যায়। এই সাপ কোবরা ও রেটেল সাপের থেকে বেশি বিষাক্ত হয়ে থাকে।
এই সাপের কামড়ে একটি সুস্থ মানুষ ৪৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে। এটি রক্ত জমাট বাধিয়ে শক্ত করে দেয় এবং আপনার শরীর প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। বলা হয়ে থাকে এর একটি ছোবল ৫০টি কোবরার ছোবলের সমান।
4.Blue Ringed Octopus
এই সামুদ্রিক বিষাক্ত প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম 'Hapalochlaena'। এদেরকে টাইলি কিলার নামেও ডাকা হয়।এরা আকারে ২০ সেন্টিমিটার এবং ওজনে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।
এদের রং সাধারণত হয় হালকা বাদামী রঙের। তবে যখন হিংস্রাত্মক হয়ে উঠে তখন এদের শরীরে নীল রঙের রিং দেখা যায়।
এরা দেখতে খুব সুন্দর হলেও এদের কামড়ে আপনি কিছু সময়ের মধ্যেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সহ প্যারালাইজড হয়ে যাবেন।
এটি কয়েক মিনিটের মধ্যেই ৫/৬ জন মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট। এই বিষের প্রতিষেধকও আপনি পাবেন না।
এ অক্টোপাস জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্য প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারতীয় মহাসাগরেও পাওয়া যায়। এরা চিংড়ি, কাঁকড়াসহ অন্যান্য ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে খায়।
5.Killer bee: পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর মৌমাছি
মৌমাছিতো আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু এমন কিছু মৌমাছি রয়েছে যাদের killer bee বলা হয়। এই মৌমাছি প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়নি।
মানুষ ইউরোপ ও আফ্রিকার অনেক প্রজাতির মৌমাছির মধ্যে ক্রস ব্রিডিং করে এই killer bee মৌমাছি তৈরি করেছে।
কারণ এই মৌমাছি সাধারণ মৌমাছি থেকে ৩ গুণ বেশি মধু সংগ্রহ করতে পারে।
এরা এই পর্যন্ত প্রায় ১০০০ মানুষ এবং ঘোড়া ও অন্যান্য কিছু প্রাণীকেও মেরেছে। এদের বিষ থেকে আপনার হার্ট ফেল হতে পারে এছাড়াও আরো অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। তাই এ মৌমাছিকে শুধু ডমেস্টিকভাবে ব্যবহারের জন্য বানানো হয়েছে।
6.Box jellyfish: দেখতে সুন্দর হলেও ভয়ংকর
ভয়ংংকর এই প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম 'Cubozoa'। এরা লম্বায় ৩মিটার ও এদের ওজন ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
এদের আকৃতি বক্সের মতো বলে এদেরকে box jellyfish বলা হয়। এদের বিষ মারাত্মক রকমের বিষাক্ত।
ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনের বিচের কিনারায় এদের পাওয়া যায়।প্রতিবছর একশোরও বেশি মানুষ এদের কামড়ের শিকার হয়।
এই বিষ দিয়ে এটি শিকার করা কাঁকর বা মাছকে মূহুর্তের মধ্যেই হত্যা করতে পারে। এদের বিষ হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র এবং ত্বকের কোষকে আক্রমণ করে। যদি সাথে সাথে ডাক্তারের শরনাপন্ন না হওয়া যায়, তাহলে মৃত্যু অনিবার্য।
7.African buffalo: ভয়ংকর মহিষ
আফ্রিকায় বসবাস করা এই প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম 'Syncerus caffer'। এই প্রাণীটির ওজন ৯০০ কেজি পর্যন্ত হয়। আফ্রিকায় এ প্রাণীকে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী বলা হয়।
এরা প্রথমে কারো উপর আক্রমণ করে না।তবে যদি মনে হয় সামনে থাকা মানুষ কিংবা জীবজন্তু তাদের ক্ষতি করতে পারে,তবে তারা পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে উল্টো আক্রমণ করে বসে। প্রতিবছর ২০০ মানুষ এই প্রাণী গুলো দ্বারা মারা যায়।
অনেক সময় সিংহও এদের ভয় পায়। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী african buffalo অন্যসব প্রাণীর তুলনায় বেশি মানুষকে আহত করে।
8.Brazilian wondering spider: গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম রয়েছে যে মাকড়সার
এই মাকড়সাকে পোকামাকড়ের লিস্টে সবার উপরে রাখা হয়েছে এবং এ মাকড়সার নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে রয়েছে।
এই মাকড়সাগুলো কোস্টারিকা, কলম্বিয়া, পেরু সহ ব্রাজিলের জঙ্গলগুলোতে পাওয়া যায়। এদের এরকম নাম হওয়ার কারণ হচ্ছে রাতের বেলা খাবারের সন্ধানে জঙ্গলের মেঝে দিয়ে ঘুরে বেড়ানো।
এই মাকড়সার বৈজ্ঞানিক নাম 'Phoneutria'। এরা লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় হয়। এদের সাউথ এবং সেন্ট্রাল আমেরিকায় পাওয়া যায়।
শুধু জঙ্গলেই নয়, এরা যেকোনো ঘরেও থাকতে পারে। এই মাকড়সার বিষ মূলত নিউরোটক্সিক। এরা আপনাকে কামড় দিলে আপনার সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে যাবে। যদি সঠিক সময়ে প্রতিষেধক না নেওয়া হয় তাহলে আপনার মৃত্যুও হতে পারে।
9.Kissing Bug: ভয়ংকর পোকা
Kissing bug কে Killing bug বা vampire bug-ও বলা হয়। এ প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম 'Triatominae'। এদেরকে সাউথ আমেরিকায় পাওয়া যায়। kissing bug যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে।
এই কামড়ে ত্বকে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়। এগুলো বিশেষ একধরনের পরজীবি বহন করে যার কারণেই এটি ভয়ংকর।
এই পরজীবির কারণে Chagas Disease হয়। গবেষকদের মতে এর কারণে ৩০ শতাংশের বেশি মানুষের মারাত্মক হার্টের ও পেটের সমস্যা হয় এবং অনেকের মৃত্যুও হয়।
এরা সন্ধ্যা ও রাতে বেশি অ্যাক্টিভ থাকে। এরা চোখ ও ঠোটের কাছে সবচেয়ে বেশি কামড় দেয়। এ জন্যই হয়তো এর নাম kissing bug হয়েছে।
তবে এরা কামড় দেওয়ার পর সঠিক সময়ে ঔষধ খেলে আপনার কিছুই হবে না, কিন্তু ঔষধ নিতে না পারলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সহ মৃত্যুঝুকি তো রয়েছেই।
10. মানুষঃ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী
নাম দেখে হয়তো অবাক হচ্ছেন তবে সত্যি এটাই যে মানুষকে ছাড়া এই তালিকা অসম্পূর্ণ। ১০০০০ বছর ধরে মানুষ একে অপরকে হত্যা করছে৷ উইকিপিডিয়ার তথ্যসূত্র অনুযায়ী প্রতিবছর শুধু খুন করা হয় ৪৩৭০০০ থেকে ৪৭৫০০০ মানুষকে।
শুধু তাই নয় মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষ অন্যান্য প্রাণী বিলুপ্তির কারণ। মানুষ কেঁটে ফেলছে গাছপালা। উজার করছে বন। দূষণ ঘটাচ্ছে বায়ু, মাটি, সমুদ্রের। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
ঘটাচ্ছে যুদ্ধ, তৈরি করছে নানা যুদ্ধাস্ত্র। সব মিলিয়ে মানুষকেই এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী বলা যায়। আপনার কি মনে হয়?
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও বিষাক্ত ১০টি জীবজন্তু
Tags:
Animal Kingdom
Thats a great article
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteNice article
ReplyDelete